মিয়োসিস কাকে বলে? মিয়োসিস কোথায় ঘটে?

মিয়োসিস কাকে বলে?

মিয়োসিস হলো একটি কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া যাতে মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসটি পরপর দুবার বিভাজিত হলেও ক্রোমোজোমের বিভাজন ঘটে মাত্র একবার, ফলে অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়ে যায়।

মিয়োসিস কাকে বলে? মিয়োসিস কোথায় ঘটে?

মিয়োসিস এর পর্যায়

মিয়োসিস দুটি পর্যায় নিয়ে গঠিত

মিয়োসিস-১: এই পর্যায়ে ক্রোমোজোমের দুটি মাতৃ ক্রোমাটিড বিভক্ত হয়, কিন্তু ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক হয় না।

মিয়োসিস-২: এই পর্যায়ে মাতৃ ক্রোমাটিডগুলি আবার বিভক্ত হয়ে চারটি অপত্য কোষ তৈরি করে।

মিয়োসিস প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত ধাপে সম্পন্ন হয়:

প্রোফেজ-১

  • ক্রোমোজোমগুলি সংকুচিত হয়ে আসে এবং দৃশ্যমান হয়।
  • সেন্ট্রিওলগুলি মাইটোটিক স্পিন্ডল গঠনের জন্য বিপরীত মেরুতে সরে যায়।
  • সেন্ট্রোমিয়ারের কাছে সিস্টার ক্রোমাটিডগুলি একসাথে আবদ্ধ থাকে।

প্রোমেটাফেজ-১

  • সেন্ট্রিওলগুলি মেরুতে পৌঁছায় এবং স্পিন্ডল ফাইবারগুলি গঠন করে।
  • ক্রোমোজোমগুলি মেরুতে টানা হয়।
  • হোমোলোগাস ক্রোমোজোমগুলি জোড়ায় জোড়ায় মিলিত হয়, যাকে বাইভ্যালেন্ট বলা হয়।
  • বাইভ্যালেন্টগুলির মধ্যে ক্রসিং ওভার ঘটে, যার ফলে জিনগত বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়।

মেটাফেজ-১

  • ক্রোমোজোমগুলি কোষের মধ্যবর্তী বিষুবরেখায় সাজানো হয়।
  • স্পিন্ডল ফাইবারগুলি ক্রোমোজোমগুলির সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে সংযুক্ত হয়।

অ্যানাফেজ-১

  • সেন্ট্রোমিয়ারের বিভাজন ঘটে।
  • প্রতিটি বাইভ্যালেন্টের একটি ক্রোমোজোম একটি মেরুতে টানা হয়।

টেলোফেজ-১

  • ক্রোমোজোমগুলি মেরুর কাছে পৌঁছে যায়।
  • নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিয়াস পুনর্গঠিত হয়।

প্রোফেজ-২

  • নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিয়াস পুনরায় বিলুপ্ত হয়।
  • স্পিন্ডল ফাইবারগুলি গঠিত হয়।
  • ক্রোমোজোমগুলি সংকুচিত হয়ে আসে।

প্রোমেটাফেজ-২

  • ক্রোমোজোমগুলি মেরুতে টানা হয়।

মেটাফেজ-২

  • ক্রোমোজোমগুলি কোষের মধ্যবর্তী বিষুবরেখায় সাজানো হয়।
  • স্পিন্ডল ফাইবারগুলি ক্রোমোজোমগুলির সেন্ট্রোমিয়ারের সাথে সংযুক্ত হয়।

অ্যানাফেজ-২

  • মাতৃ ক্রোমাটিডগুলি মেরুতে টানা হয়।

টেলোফেজ-২

  • ক্রোমোজোমগুলি মেরুর কাছে পৌঁছে যায়।
  • নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিয়াস পুনর্গঠিত হয়।
  • কোষ বিভাজন ঘটে।

মিয়োসিস প্রক্রিয়াটি জীবদেহের প্রজনন, বিশেষ করে যৌন প্রজননে গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিষেকের জন্য প্রয়োজনীয় হ্যাপ্লয়েড (n) ক্রোমোজোম সংখ্যাযুক্ত গ্যামেট তৈরি করে।

মিয়োসিস কাকে বলে? মিয়োসিস কোথায় ঘটে?

মিয়োসিস কোথায় ঘটে?

মিয়োসিস কোষ চক্রের একটি অংশ, যেখানে একটি কোষ থেকে দুটি নতুন কোষ তৈরি হয়। এই কোষ বিভাজনে ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়, তাই মিয়োসিস শুধুমাত্র গ্যামেট কোষে ঘটে। গ্যামেট কোষ হল যৌন জননকারী কোষ, যেমন শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু।

সুতরাং, মিয়োসিস ঘটে:

  • প্রাণীদের শুক্রাশয় এবং ডিম্বাশয়ে
  • উদ্ভিদের পরাগধানী এবং ডিম্বাশয়ে
  • ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার গ্যামেট কোষে

মানুষের দেহে, মিয়োসিস শুক্রাশয় এবং ডিম্বাশয়ে ঘটে। শুক্রাশয়ে মিয়োসিস শুক্রাণু তৈরি করে, এবং ডিম্বাশয়ে মিয়োসিস ডিম্বাণু তৈরি করে। এই গ্যামেট কোষগুলি একত্রিত হয়ে জাইগোট তৈরি করে, যা একটি নতুন ভ্রূণের জন্ম দেয়।

মিয়োসিস কেন হয়?

মিয়োসিস হওয়ার দুটি প্রধান কারণ হল:

ক্রোমোজোমের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: মিয়োসিসের ফলে গ্যামেট কোষের ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়। এর ফলে, দুটি গ্যামেট কোষ একত্রিত হয়ে জাইগোট তৈরি করলেও জাইগোটটির ক্রোমোজোমের সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোমের সংখ্যার সমান থাকে। এটি প্রজাতির বৈশিষ্ট্য রক্ষায় সাহায্য করে।

জিনগত বৈচিত্র্য বৃদ্ধি: মিয়োসিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হল ক্রসিং ওভার। ক্রসিং ওভারের ফলে দুটি ক্রোমোজোমের মধ্যে জিনগুলির বিনিময় ঘটে। এটি নতুন জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে, যা প্রজাতির বিবর্তনে সাহায্য করে।

সুতরাং, মিয়োসিস হল একটি গুরুত্বপূর্ণ কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া যা প্রজাতির বৈশিষ্ট্য রক্ষা ও বিবর্তনে সাহায্য করে।

মিয়োসিস কোষ বিভাজনের গুরুত্ব

মিয়োসিস কোষ বিভাজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা প্রজাতির বৈশিষ্ট্য রক্ষা ও বিবর্তনে সাহায্য করে। মিয়োসিসের গুরুত্ব নিম্নরূপ:

ক্রোমোজোমের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: মিয়োসিসের ফলে গ্যামেট কোষের ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়। এর ফলে, দুটি গ্যামেট কোষ একত্রিত হয়ে জাইগোট তৈরি করলেও জাইগোটটির ক্রোমোজোমের সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোমের সংখ্যার সমান থাকে। এটি প্রজাতির বৈশিষ্ট্য রক্ষায় সাহায্য করে।

জিনগত বৈচিত্র্য বৃদ্ধি: মিয়োসিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হল ক্রসিং ওভার। ক্রসিং ওভারের ফলে দুটি ক্রোমোজোমের মধ্যে জিনগুলির বিনিময় ঘটে। এটি নতুন জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে, যা প্রজাতির বিবর্তনে সাহায্য করে।

মিয়োসিসের গুরুত্ব নিম্নলিখিত ক্ষেত্রেও দেখা যায়:

  • যৌন জনন: মিয়োসিস গ্যামেট কোষ তৈরি করে, যা যৌন জননের জন্য প্রয়োজনীয়।
  • বংশগতি: মিয়োসিস প্রজাতির বৈশিষ্ট্য রক্ষায় সাহায্য করে।
  • বিবর্তন: মিয়োসিস নতুন জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে, যা প্রজাতির বিবর্তনে সাহায্য করে।

সুতরাং, মিয়োসিস হল একটি গুরুত্বপূর্ণ কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া যা প্রজাতির বৈশিষ্ট্য রক্ষা ও বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

টার্মিনাল মিয়োসিস কাকে বলে?

টার্মিনাল মিয়োসিস হল মিয়োসিসের দ্বিতীয় বিভাগ, যাতে দুটি কোষের কোষের অর্ধেক ক্রোমোজোম থাকে। টার্মিনাল মিয়োসিস হল মিয়োসিসের শেষ পর্যায়, যাতে কোষের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়। টার্মিনাল মিয়োসিসের ফলে চারটি নতুন কোষ তৈরি হয়, যার প্রত্যেকটির মাতৃকোষের এক-চতুর্থাংশ ক্রোমোজোম থাকে।

টার্মিনাল মিয়োসিস নিম্নলিখিত দুটি প্রধান পর্যায়ে বিভক্ত:

অ্যানাফেস II: মেটাফেসে II-তে, ক্রোমাটিডগুলি মেটাফেজ প্লেটে সংযুক্ত থাকে। অ্যানাফেস II-তে, ক্রোমাটিডগুলি দুটি মেরোসোমের মধ্যে বিভক্ত হয়। এই বিভাজনটি অ্যানাফেস I-এর মতোই, তবে ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেকের চেয়ে কম।

টেলোফেস II: টেলোফেস II-তে, মেরোসোমের নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম বিভাজিত হয়। এর ফলে চারটি নতুন কোষ তৈরি হয়, যার প্রত্যেকটির মাতৃকোষের এক-চতুর্থাংশ ক্রোমোজোম থাকে।

টার্মিনাল মিয়োসিস হল যৌন জননের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। গ্যামেট কোষগুলির অর্ধেক ক্রোমোজোম থাকে, যাতে দুটি গ্যামেট কোষ একত্রিত হয়ে জাইগোট তৈরি করলেও জাইগোটটির ক্রোমোজোমের সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোমের সংখ্যার সমান থাকে।

Leave a Comment