তাপগতিবিদ্যা | HSC পদার্থবিজ্ঞান Notes

পদার্থবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র নোট
তাপগতিবিদ্যা নোট

তাপ কাকে বলে?

তাপ এক প্রকার শক্তি যা কোনো বস্তু গ্রহণ করলে উত্তপ্ত হয়, বর্জন করলে শীতল হয়।

তাপমাত্রা কাকে বলে?

তাপমাত্রা হচ্ছে কোনো বস্তুর তাপীয় অবস্থা যা অন্য বস্তুর সংস্পর্শে আসলে তাপের-আদান প্রদান নিয়ন্ত্রণ করে।

Note: তাপαতাপমাত্রা

তথ্যঃ

  • পরস্পরের সংস্পর্শে থাকা দুটি বস্তুর মধ্যে তাপের আদান-প্রদান তাপের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না।, তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।
  • দুটি বস্তুর মধ্যে তাপমাত্রা সমান থাকলে তাপমাত্রা আদান-প্রদান হয় না এবং তাপমাত্রা ভিন্ন হলে উচ্চ তাপমাত্রার বস্তু থেকে তাপ নিম্ন তাপমাত্রার বস্তুর দিকে সঞ্চালিত হয়।
  • দুটি বস্তুতে তাপের পরিমাণ সমান হলেও তাপমাত্রা ভিন্ন হলে তাপের আদান-প্রদান হবে।

তাপীয় সমতা বা তাপগতীয় সাম্যাবস্থা

পরস্পরের সংস্পর্শে থাকা দুটি বস্তুর মধ্যে যখন তাপের আদান-প্রদান ঘটে না, তখন সে অবস্থাকে তাপীয় সমতা বা তাপীয় সাম্যাবস্থা বলে।

Note: দুটি বস্তুর তাপমাত্রা সমান হলে বস্তুটি তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকে।

তাপগতিবিদ্যার শূন্যতম সূত্র

দুটি বস্তু তৃতীয় কোনো বস্তুর সাথে তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকলে প্রথমোক্ত বস্তু দুটিও তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকবে।

থার্মোমিটার কাকে বলে?

যে যন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুর তাপমাত্রা সঠিকভাবে পরিমাপ বা নির্ণয় করা যায়, তাকে থার্মোমিটার বলে।

Note: উষ্ণতা পরিমাপক যন্ত্র

উষ্ণতামিতিক ধর্ম কাকে বলে?

তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে বিভিন্ন পদার্থের যেসকল ধর্ম নিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হয়, তাদেরকে উষ্ণতামিতিক ধর্ম বলে।

উষ্ণতামিতিক পদার্থ কাকে বলে?

যেসকল পদার্থের উষ্ণতাভিত্তিক ধর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের থার্মোমিটার তৈরি করা হয়, তাদেরকে উষ্ণতামিতিক পদার্থ বলে।

বিভিন্ন উষ্ণতামিতিক ধর্ম ও পদার্থ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের থার্মোমিটার তৈরি করা হয়।

১) তরল থার্মোমিটার বা পারদ থার্মোমিটার

২) স্থির চাপ গ্যাস থার্মোমিটার

৩) স্থির আয়তন গ্যাস থার্মোমিটার

১) তরল থার্মোমিটার বা পারদ থার্মোমিটার

উষ্ণতামিতিক পদার্থঃ পারদ

উষ্ণতামিতিক ধর্মঃ পারদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি

২) স্থির চাপ গ্যাস থার্মোমিটার

উষ্ণতামিতিক পদার্থঃ গ্যাস

উষ্ণতামিতিক ধর্মঃ গ্যাসের আয়তন

৩) স্থির আয়তন গ্যাস থার্মোমিটার

উষ্ণতামিতিক পদার্থঃ গ্যাস

উষ্ণতামিতিক ধর্মঃ চাপ

রোধ থার্মোমিটার

উষ্ণতামিতিক পদার্থঃ পরিবাহী রোধ

উষ্ণতামিতিক ধর্মঃ তড়িৎ পরিবাহী

Note: তাপমাত্রা বাড়লে পরিবাহীর রোধ বাড়ে

থার্মিস্টার

উষ্ণতামিতিক পদার্থঃ অর্ধ-পরিবাহী

উষ্ণতামিতিক ধর্মঃ পরিবাহীর রোধ

Note: তাপমাত্রা বাড়লে অর্ধ-পরিবাহীর রোধ কমে

থার্মোকাপল থার্মোমিটার/তাপ যুগল থার্মোমিটার

উষ্ণতামিতিক পদার্থঃ একজোড়া ভিন্ন ধাতুর পরিবাহী

উষ্ণতামিতিক ধর্মঃ পরিবাহীর প্রবাহমাত্রা

পাইরোমিটার কাকে বলে?

অত্যধিক উচ্চ তাপমাত্রার বস্তু যে মিটারের সাহায্যে তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়, তাকে পাইরোমিটার বলে।

থার্মোমিটার দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ

১) এক স্থির বিন্দু থার্মোমিটার

২) দুই স্থির বিন্দু থার্মোমিটার

তাপমাত্রা নির্ণয়ে বিভিন্ন স্কেলে মধ্যে সম্পর্ক

অভ্যন্তরীণ শক্তি কাকে বলে?

প্রত্যেক বস্তুর মধ্যে একটা সহজাত শক্তি নিহিত থাকে, যা কাজ সম্পাদন করতে পারে যা অন্য শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। বস্তুর অভ্যন্তরস্থ অণু, পরমাণু ও মৌলিক কণাসমূহের রৈখিক গতি, স্পন্দন গতি ও আবর্তন গতি এবং তাদের মধ্যকার পারস্পরিক বলের কারণে উদ্ভূত এই শক্তিকেই অভ্যন্তরীণ বা অন্তস্থ শক্তি বলে।

সিস্টেম কাকে বলে?

পরীক্ষা নিরীক্ষার সময় আমরা জড় জগতের যে নির্দিষ্ট অংশ নিয়ে বিবেচনা করি তাকে সিস্টেম বলে।

উন্মুক্ত সিস্টেম কাকে বলে?

যে সিস্টেম পরিবেশের সাথে ভর ও শক্তি উভয়ই বিনিময় করতে পারে তাকে উন্মুক্ত সিস্টেম বলে।

বদ্ধ সিস্টেম কাকে বলে?

যে সিস্টেম পরিবেশের সাথে শুধু শক্তি বিনিময় করতে পারে ভর বিনিময় করতে পারে না তাকে বদ্ধ সিস্টেম বলে।

বিচ্ছিন্ন সিস্টেম কাকে বলে?

যে সিস্টেম পরিবেশ দ্বারা মোটেই প্রভাবিত হয় না অর্থাৎ পরিবেশের সাথে ভর বা শক্তি কোনো কিছুই বিনিময় করে না তাকে বিচ্ছিন্ন সিস্টেম বলে।

তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র

যান্ত্রিক শক্তি তথা কাজকে তাপে বা তাপশক্তিকে কাজে তথা যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করা হলে যান্ত্রিক শক্তি ও তাপ পরস্পরের সমানুপাতিক হবে।

সমচাপ প্রক্রিয়া কাকে বলে?

যে তাপগতীয় প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের চাপের কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে সমচাপ প্রক্রিয়া বলে।

সমোষ্ণ প্রক্রিয়া কাকে বলে?

যে তাপগতীয় প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের তাপমাত্রা স্থির থাকে তাকে সমোষ্ণ প্রক্রিয়া বলে। সমোষ্ণ প্রক্রিয়ায় dQ = dW।

রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া কাকে বলে?

যে তাপগতীয় প্রক্রিয়ায় সিস্টেম থেকে তাপ বাইরে যায় না বা বাইরে থেকে তাপ সিস্টেমে আসে না তাকে রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া বলে। রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় dQ = 0, ফলে dW = -dU।

প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া কাকে বলে?

যে প্রক্রিয়া বিপরীতমুখী হয়ে প্রত্যাবর্তন করে এবং সম্মুখবর্তী ও বিপরীতমুখী প্রক্রিয়ায় প্রতি স্তরে তাপ ও কাজের ফলাফল সমান ও বিপরীত হয় সেই প্রক্রিয়াকে প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া বলে।

অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া কাকে বলে?

যে প্রক্রিয়া বিপরীতমুখী হয়ে প্রত্যাবর্তন করতে পারে না অর্থাৎ সম্মুখবর্তী ও বিপরীতমুখী প্রতি স্তরে তাপ ও কাজের ফলাফল সমান ও বিপরীত হয় না তাকে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া বলে।

তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র

কার্নোর বিবৃতি

কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপশক্তিকে সম্পূর্ণরূপে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তররে সক্ষম এমন যন্ত্র নির্মাণ সম্ভব নয়।

প্ল্যাঙ্কের বিবৃতি

এমন কোনো ইঞ্জিন তৈরি করা সম্ভব নয়, যেটা কোনো বস্তু থেকে তাপ গ্রহণ করে অবিরামভাবে কাজে পরিণত করবে অথচ পরিবেশের কোনো পরিবর্তন হবে না।

ক্লসিয়াসের বিবৃতি

বাইরের শক্তির সাহায্য ছাড়া কোনো স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের পক্ষের নিম্ন উষ্ণতার বস্তু হতে উচ্চতর উষ্ণতার বস্তুতে তাপের স্থানান্তর সম্ভব নয়।

কেলভিনের বিবৃতি

কোনো বস্তুকে এর পরিপার্শ্বের শীতলতম অংশ হতে অধিকতর শীতল করে শক্তির অবিরাম সরবরাহ পাওয়া সম্ভব নয়।

তাপ ইঞ্জিন কাকে বলে?

যে যন্ত্র তাপশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে তাকে তাপ ইঞ্জিন বলে।

কানোচক্র

যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাজ করে একটি আদর্শ তাপ ইঞ্জিন তথা কার্নো ইঞ্জিন অবিরাম শক্তি সরবরাহ করে আদি অবস্থায় ফিরে আসতে পারে তাকে কার্নো চক্র বলে। কার্নো চক্রে প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যনির্বাহী বস্তু উৎস থেকে তাপ গ্রহণ করে একটি নির্দিষ্ট চাপ, আয়তন ও তাপমাত্রা হতে আরম্ভ করে একটি সমোষ্ণ প্রসারণ ও একটি রূদ্ধতাপীয় প্রসারণ এবং একটি সমোষ্ণ সঙ্কোচন ও একটি রূদ্ধতাপীয় সঙ্কোচনের মাধ্যমে তাপের কিছু অংশ কাজে রূপান্তরিত করে এবং বাকি অংশ গ্রাহকে বর্জন করে আদি অবস্থায় ফিরে আসে।

রেফ্রিজারেটর কাকে বলে?

রেফ্রিজারেটর এক ধরনের তাপ ইঞ্জিন যা বিপরীতমুখী হয়ে কাজ করে। রেফ্রিজারেটর পরিবেশের চেয়ে শীতলতর বস্তু হতে তাপ গ্রহণ করে কিছু কাজ সম্পাদন করে এবং বাকি তাপশক্তি উৎসে বর্জন করে।

এনট্রপি ও বিশৃঙ্খলা (Entropy and Disorder)

এনট্রপি কাকে বলে?

কোনো সিস্টেমের শক্তির রূপান্তরের অক্ষমতা বা অসম্ভাব্যতাকে বা রূপান্তরের জন্য শক্তির অপ্রাপ্ততাকে এনট্রপি লে। পৃথিবীর এনট্রপি ক্রমাগত বাড়ছে।

এনট্রপির তাৎপর্য

তাপগতিবিদ্যায় এনট্রপির গুরুত্ব অপরিসীম। এনট্রপির নিম্নলিখিত তাৎপর্য রয়েছে।

১) এনট্রপি একটি প্রাকৃতিক রাশি যার মান তাপ ও পরম তাপমাত্রার অনুপাতের সমান।

২) এটি বস্তুর একটি তাপীয় ধর্ম যা তাপ সঞ্চালনের দিক নির্দেশ করে।

৩) এনট্রপি একটি বস্তুর তাপগতীয় অবস্থা নির্ধারণে সহায়তা করে।

৪) এনট্রপিকে বস্তুর তাপীয় জড়তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৫) এটি তাপ, চাপ, আয়তন, অভ্যন্তরীণ শক্তি, চুম্বকীয় অবস্থার ন্যায় কোনো বস্তুর অবস্থা প্রকাশ করে।

৬) এটিকে কোনো ভৌত রাশি দ্বারা প্রকাশ করা যায় না।

৭) এনট্রপি বৃদ্ধি পেলে বস্তু শৃঙ্খল অবস্থা হতে বিশৃঙ্খল অবস্থায় পরিণত হয়।

৮) তাপমাত্রা ও চাপের ন্যায় একে অনুভব করা যায় না।

৯) একে ক্যালরি/ডিগ্রি এককে প্রকাশ করা যায়।

১০) পরমশূন্য তাপমাত্রায় এনট্রপির মান শূন্যের দিকে অগ্রসর হয়।


পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্র


অধ্যায় - ১ : তাপগতিবিদ্যা

অধ্যায় - ৭ : ভৌত আলোক বিজ্ঞান

No Comment
Add Comment
comment url