প্রত্যেক সরকারই কতকগুলো বিধি-বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এসব বিধি-বিধানকে
সমষ্টিগতভাবে সংবিধান বলা হয়। রাজনৈতিক ব্যবস্থা যে প্রকৃতিরই হোক না কেন,
সংবিধান ছাড়া কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থাই চলতে পারে না। রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল
ভিত্তি হচ্ছে সংবিধান।
সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ
সংবিধানকে মোট চার ভাগে ভাগ করা হয়। যথা−
(১) লিখিত, (২) অলিখিত,
(৩) সুপরিবর্তনীয় এবং (৪) দুষ্পরিবর্তনীয়।
লিখিত সংবিধান কাকে বলে?
যে সংবিধান এক বা একাধিক দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে তাকে লিখিত সংবিধান বলা হয়।
গেটেলের ভাষায় “যখন কোন দলিলে সরকারী প্রশাসন ব্যবস্থার সকল মৌলিক
নীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত
থাকে তখন তাকে লিখিত সংবিধান বলে।”
বাংলাদেশ, ভারত, আমেরিকা, ফ্রান্স প্রভৃতি রাষ্ট্রের সংবিধান লিখিত। লিখিত
সংবিধানের অধিকাংশ অংশ লিখিত।
লিখিত সংবিধানের বৈশিষ্ট্য
- লিখিত সংবিধান সুচিন্তিতভাবে গণ-পরিষদের মাধ্যমে রচনা করা হয়।
- লিখিত সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় বা সুপরিবর্তনীয় হতে পারে।
- লিখিত সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রাধান্য দেখা যায়।
- লিখিত সংবিধানে শাসনতান্ত্রিক আইন ও সাধারণ আইনের মধ্যে পার্থক্য করা হয়।
- লিখিত সংবিধান সুস্পষ্ট ও নিশ্চিত।
লিখিত সংবিধানের গুণ
লিখিত সংবিধানের কতকগুলো উল্লেখযোগ্য গুণ রয়েছে। সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
(১) লিখিত সংবিধান সুস্পষ্ট− লিখিত সংবিধানের ধারাগুলো সুস্পষ্টভাবে
লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে সংবিধানের বিধি বিধান সম্পর্কে কারও কোনরূপ সন্দেহ থাকে না।
(২) লিখিত সংবিধান স্থিতিশীল− লিখিত সংবিধান স্পষ্ট ও দুষ্পরিবর্তনীয়
হওয়ায় একে সহজে পরিবর্তন করা যায় না। কাজেই এ সংবিধান স্থায়িত্ব লাভ করে।
(৩) যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের জন্য উপযোগী− যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে কেন্দ্রীয়
ও প্রাদেশিক সরকার এবং কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন একই সাথে বলবৎ করা হয়। এ
ব্যবস্থায় লিখিত সংবিধান সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে
সাহায্য করে।
লিখিত সংবিধানের দোষ
লিখিত সংবিধানের গুণের পাশাপাশির কিছু কিছু দোষও রয়েছে। সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা
হলঃ
(১) জাতীয় অগ্রগতির জন্য সহায়ক নয় – লিখিত সংবিধান সাধারণত অনমনীয় বা
দুষ্পরিবর্তনীয় হয়ে থাকে। জাতীয় চাহিদার পরিবর্তন ঘটলে সংবিধান পরিবর্তনের
প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু লিখিত সংবিধান সহজে পরিবর্তন করা যায় না বলে অনেক
ক্ষেত্রে অগ্রগতি ব্যাহত হয়।
(২) বিপ্লবের সম্ভাবনা থাকে বেশি- সামাজিক পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে
চলতে পারে না বলে পরিবর্তনের জন্য বিপ্লব দেখা দেয়। ফলে রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায়
অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
(৩) পরিপূর্ণতার অভাব- সংবিধানে সব কিছু লিখা সম্ভব নয়, সংগতও নয়। কাজেই
লিখিত সংবিধানের অধিকাংশ লিখিত হলেও অপূর্ণতা থেকেই যায়।
তবে, একথা সত্য যে, বিশ্বের কোন রাষ্ট্রেরই সংবিধান পুরোপুরি লিখিত বা অলিখিত নয়।
আরো জানুনঃ সংবিধান, লিখিত সংবিধান, অলিখিত সংবিধান, সুপরিবর্তনীয় সংবিধান, দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য
প্রশ্ন ১: লিখিত সংবিধান কী?
উত্তর: লিখিত সংবিধান হলো একটি দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো, মৌলিক অধিকার, এবং নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্যাবলী সংবলিত একটি আইনি দলিল। এটি একটি দেশের সর্বোচ্চ আইন।
প্রশ্ন ২: লিখিত সংবিধানের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: লিখিত সংবিধানের উদ্দেশ্য হলো একটি দেশের শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করা। এটি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা এবং দেশের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন ৩: বাংলাদেশের সংবিধান কখন প্রণয়ন করা হয়?
উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রণয়ন করা হয়। এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন।
প্রশ্ন ৪: বাংলাদেশের সংবিধানে কতটি অনুচ্ছেদ রয়েছে?
উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানে ১৬৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে।
প্রশ্ন ৫: বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি কী কী?
উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি হলো:
- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
- ধর্মনিরপেক্ষতা
- সমাজতন্ত্র
- গণতন্ত্র
- জাতীয়তাবাদ
প্রশ্ন ৬: বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকারের কী কী রূপ রয়েছে?
উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকারের চারটি রূপ রয়েছে:
- ব্যক্তিগত অধিকার
- রাজনৈতিক অধিকার
- অর্থনৈতিক অধিকার
- সামাজিক অধিকার
প্রশ্ন ৭: বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকের কী কী কর্তব্য রয়েছে?
উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকের কর্তব্যাবলীর মধ্যে রয়েছে:
- আইনের প্রতি আনুগত্য
- দেশপ্রেম
- রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষা
- মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা
প্রশ্ন ৮: বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি কী?
উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন।
প্রশ্ন ৯: বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধন কখন কখন হয়েছে?
উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানের মোট ১৯টি সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধন ২০১৮ সালে করা হয়।
প্রশ্ন ১০: বাংলাদেশের সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধন কী ছিল?
উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধন ২০১৮ সালে করা হয়। এই সংশোধনে সংসদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা বৃদ্ধি, এবং প্রধান বিচারপতির পদমর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।