ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কাকে বলে?
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলতে বুঝায় এমন একটি জনসমষ্টি যারা মোটামুটিভাবে একটি অঞ্চলে বসবাস করে ,যাদের একটি নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐক্য রয়েছে এবং যারা অন্য অনুরূপ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে নিজেদের পৃথক মনে করে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী |
একটি নৃগোষ্ঠী বা নৃগোষ্ঠী হল মানুষের একটি গ্রুপকে একে অপরের সাথে ভাগ করে নেওয়া গুণাবলীর ভিত্তিতে পরিচয় দেয় যা তাদের অন্য গ্রুপ থেকে পৃথক করে।
যেমন ঐতিহ্য, পূর্বপুরুষ, ভাষা, ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি, জাতি, ধর্ম, বা তাদের বসবাসের ক্ষেত্রে সামাজিক আচরণের একটি সাধারণ সেট।
জাতিগত শব্দটি বিশেষত জাতিগত জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে জাতি বর্ণের সাথে মাঝে মাঝে জাতিসত্তার ব্যবহার হয় এবং এটি পৃথক হলেও বর্ণের ধারণার সাথে সম্পর্কিত।
বাংলাদেশে ৪৫টিরও অধিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আছে।বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সমাহারের কারণে আমাদের সমাজ এতো বৈচিত্র্যময়।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হল এমন একটি জনগোষ্ঠী যা সংখ্যায় কম এবং তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে:
- সংখ্যার স্বল্পতা: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা সাধারণত মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম।
- স্বতন্ত্র সংস্কৃতি: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলি তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র ভাষা, ধর্ম, ঐতিহ্য এবং জীবনধারা রয়েছে।
- অন্য জনগোষ্ঠীর থেকে ভিন্নতা: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলি প্রায়শই অন্য জনগোষ্ঠীর থেকে তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য, ভাষা, ধর্ম বা ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়।
- পরিচয়ের বোধ: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা প্রায়শই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত থাকেন এবং তারা তাদের নিজস্ব পরিচয়ের বোধ রাখেন।
- অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সাথে মিথস্ক্রিয়া: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলি প্রায়শই অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সাথে মিথস্ক্রিয়া করে, তবে তারা তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বজায় রাখে।
- অধিকারের স্বীকৃতি: ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকারগুলি আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা স্বীকৃত, তবে তারা প্রায়শই সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বৈষম্যের সম্মুখীন হয়।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যগুলি তাদেরকে তাদের নিজস্ব অনন্য পরিচয় এবং সংস্কৃতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। তারা বিশ্বের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তালিকা
বাংলাদেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একটি তালিকা এখানে দেওয়া হল:
- চাকমা – পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বৃহত্তম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তারা তাদের নিজস্ব ভাষা, চাকমারি, এবং বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে।
চাকমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী |
- মারমা – পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তারা তাদের নিজস্ব ভাষা, মারমা, এবং বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে।
মারমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী |
- সাঁওতাল – দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তারা তাদের নিজস্ব ভাষা, সাঁওতালি, এবং সনাতন ধর্ম পালন করে।
সাঁওতাল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী |
- ত্রিপুরা – দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তারা তাদের নিজস্ব ভাষা, ত্রিপুরী, এবং বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে।
ত্রিপুরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী |
- গারো – দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তারা তাদের নিজস্ব ভাষা, গারো, এবং খ্রিস্টান ধর্ম পালন করে।
- হাজং – দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তারা তাদের নিজস্ব ভাষা, হাজং, এবং ইসলাম ধর্ম পালন করে।
হাজং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী |
- খুলনা – দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তারা তাদের নিজস্ব ভাষা, খুলনা, এবং ইসলাম ধর্ম পালন করে।
- মনিপুরী – দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তারা তাদের নিজস্ব ভাষা, মনিপুরী, এবং হিন্দু ধর্ম পালন করে।
মনিপুরী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী |