গ্রাবরেখা কাকে বলে?
অধঃক্ষিপ্ত হিমবাহ কাকে বলে?
গ্রাবরেখা বা অধঃক্ষিপ্ত হিমবাহ হলো হিমবাহের অবক্ষেপণ বা সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট
ভূমিক্ষয়। হিমবাহ অগ্রসর হওয়ার সময় এর সাথে যেসব পাথরখণ্ড, বালি, কাদা প্রভৃতি
বাহিত হয়, হিমবাহ গলতে শুরু করলে সেগুলি হিমবাহের প্রবাহপথের আশে পাশে সঞ্চিত হতে
থাকে। এই অসংবদ্ধ মিশ্র পদার্থের সঞ্চয়কে গ্রাবরেখা বা
অধঃক্ষিপ্ত হিমবাহ বলে।
গ্রাবরেখা |
গ্রাবরেখা এর প্রকারভেদ
অবস্থান ও প্রকৃতি অনুযায়ী গ্রাবরেখাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হলো –
পার্শ্ব গ্রাবরেখাঃ
হিমবাহের দুইপাশে সরু দৈর্ঘ্য আকারে যে সরু গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয়, তাকে পার্শ্ব
গ্রাবরেখা বলে।
ভূমি গ্রাবরেখাঃ হিমবাহের নিচের যে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয়, তাকে ভূমি
গ্রাবরেখা বলে।
প্রান্ত গ্রাবরেখাঃ হিমবাহ যেখানে এসে মিলিত হয় অর্থাৎ হিমবাহের
সামনে সঞ্চিত গ্রাবরেখাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে।
মধ্য গ্রাবরেখাঃ দু’দিক থেকে এগিয়ে আসা দুটি হিমবাহ যেখানে মিলিত হয়,
সেখানে উভয়ের গ্রাবরেখা দ্বারা সৃষ্ট গ্রাবরেখাকে মধ্য গ্রাবরেখা বলে।
হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখাঃ
অনেক সময় নানা আকৃতির পাথরের টুকরো হিমবাহের মধ্যে আবদ্ধ হয়। এই ধরনের গ্রাবরেখা
হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা নামে পরিচিত।
অবিন্যস্ত গ্রাবরেখাঃ হিমবাহের প্রান্তভাগে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে সঞ্চিত
গ্রাবরেখাকে অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা বলে।
বলয়ধর্মী গ্রাবরেখাঃ হিমবাহের প্রান্তভাগে বলয়ের আকারে সঞ্চিত গ্রাবরেখাকে
বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা বলে।
রোজেন গ্রাবরেখাঃ গ্রাবরেখাগুলি একে অপরের ওপর সঞ্চিত হলে তাকে রোজেন
গ্রাবরেখা বলে।
স্তরায়িত সামুদ্রিক গ্রাবরেখাঃ উপকূল অঞ্চলে হিমবাহ প্রসারিত হলে সমুদ্রের
তলদেশে স্তরে স্তরে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয় এদের স্তরায়িত সামুদ্রিক গ্রাবরেখা বলে।
আরো পড়ুনঃ
- উদ্ভিদ কাকে বলে?
- পরিস্রাবণ কাকে বলে?
- সনেট কাকে বলে?
- বিজ্ঞাপন কি? বিজ্ঞাপন কাকে বলে? বিজ্ঞাপনের প্রকারভেদ
- পাঠ্যক্রম কাকে বলে?
- মাতৃভাষা কাকে বলে?
- গ্রাবরেখা কাকে বলে? গ্রাবরেখার প্রকারভেদ
- সূক্ষ্মকোণ কাকে বলে?
- শিখন নকশা কাকে বলে?
গ্রাবরেখা কিভাবে সৃষ্টি হয়?
গ্রাবরেখার গঠনের প্রক্রিয়া নিম্নরূপ:
-
হিমবাহের প্রবাহ: উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ প্রবাহিত হয়। এই
প্রবাহের ফলে হিমবাহের তলদেশে থাকা শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি
ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
- সঞ্চয়: ক্ষয়প্রাপ্ত এই পদার্থগুলি হিমবাহের তলদেশে সঞ্চিত হয়।
- গ্রাবরেখার গঠন: এই সঞ্চিত পদার্থের স্তরই হল গ্রাবরেখা।
গ্রাবরেখার বিভিন্ন ধরনের হয়। এগুলির মধ্যে রয়েছে:
- অগ্রভাগ গ্রাবরেখা: হিমবাহের অগ্রভাগে সঞ্চিত গ্রাবরেখা।
- পার্শ্ব গ্রাবরেখা: হিমবাহের পার্শ্বদেশে সঞ্চিত গ্রাবরেখা।
- ভিত্তি গ্রাবরেখা: হিমবাহের তলদেশে সঞ্চিত গ্রাবরেখা।
গ্রাবরেখার গঠন হিমবাহের গঠন, প্রবাহের গতিবেগ, এবং আবহাওয়ার অবস্থার উপর নির্ভর
করে।
গ্রাবরেখার উদাহরণ
গ্রাবরেখার কিছু উদাহরণ হল:
-
নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট কুক পর্বতমালার হিমাবাহের অগ্রভাগে অবস্থিত অগ্রভাগ
গ্রাবরেখা।
-
ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হিমালয় পর্বতমালার হিমাবাহের পার্শ্বদেশে অবস্থিত
পার্শ্ব গ্রাবরেখা।
-
আমেরিকার আলাস্কা রাজ্যের গ্রেট বরফঢাকা পর্বতমালার হিমাবাহের তলদেশে অবস্থিত
ভিত্তি গ্রাবরেখা।
গ্রাবরেখার ভূতাত্ত্বিক এবং ভূ-সংস্থানিক গুরুত্ব রয়েছে। এগুলি হিমবাহের গঠন এবং
গতিপথ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। এছাড়াও, গ্রাবরেখা ভূমিতে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ
এবং প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবেও কাজ করে।