ফটোপিরিয়ড কাকে বলে?
উদ্ভিদের পুষ্প ধারণের জন্য দিবালোকের দৈর্ঘ্যের নির্দিষ্ট সময়কাল হলো ফটোপিরিয়ড।
প্রতিটি উদ্ভিদের পুষ্প প্রস্ফুটন আলোর সময়কাল বা দিবা – দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভরশীল এবং প্রস্ফুটন নিয়ন্ত্রণকারী আলোর সময়কালকে ফটোপিরিয়ড বলে।
আপেক্ষিক দিবা – দৈর্ঘ্য বা রাত্রি – দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে পুষ্প প্রস্ফুটনের ঘটনাকে ফটোপিরিয়ডিজম বা আলোকপর্যায়বৃত্তি বলে।
ফটোপিরিয়ডের ভিত্তিতে উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ
প্রতিটি প্রজাতির পুষ্প প্রস্ফুটন আলোর একটি সুনির্দিষ্ট সময়কালের উপর নির্ভরীল যাকে সংকট আলোক কাল বলে। পুষ্প প্রস্ফুটনের ওপর সংকট আলোককালের প্রভাবের ভিত্তিতে উদ্ভিদ গোষ্ঠীকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন –
হ্রস্ব দিবা উদ্ভিদঃ সংকট আলোককালের থেকে কম সময় আলো দিলে যে সব উদ্ভিদের পুষ্প প্রস্ফুটন হয়, তাদের হ্রস্ব দিবা উদ্ভিদ বলে। একটি উদ্ভিদের সংকট আলোককাল 10 ঘণ্টা হলে হ্রস্ব দিবা উদ্ভিদের ক্ষেত্রে তার থেকে কম সময় আলো দিলে (৯ ঘণ্টা) ফুল ফুটবে কিন্তু তার বেশি সময়কাল ধরে আলো নিলে (যেমন – 11 ঘণ্টা) পুষ্প প্রস্ফুটিত হবে না। এই সব উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অন্ধকার সময় বা রাত্রিকাল যত দীর্ঘায়িত হবে এদের পুষ্প প্রস্ফুটনের হার তত বেড়ে যাবে। এই কারণে এদের দীর্ঘ রাত্রি উদ্ভিদও বলা হয়। উদাহরণ – আলো, তামাক। সাধারণত এইসব উদ্ভিদের ফুল শীতকালে ফোটে।
দীর্ঘ দিবা উদ্ভিদঃ সংকট আলোককালের থেকে বেশি সময়কাল ধরে আলো দিলে যে সব উদ্ভিদের পুস্প প্রস্ফুটন হয়, তাদের দীর্ঘ দিবা উদ্ভিদ বলে। স্বাভাবিকভাবেই রাত্রিকাল দীর্ঘ হলে এদের ফুল ফোটে না বা স্বল্প অন্ধকারকাল থাকলে এদের পুষ্প প্রস্ফুটনের হার বেড়ে যায়, তাই এদের হ্রস্ব – রাত্রি উদ্ভিদও বলা হয়। গ্রীষ্মকালের যেসব গাছের ফুল ফোটে তারা সচরাচর দীর্ঘ উদ্ভিদ হয়। উদাহরণ – হায়োসায়ামাস, পালং।
দিবা – নিরপেক্ষ উদ্ভিদঃ যে সব উদ্ভিদ দিবা দৈর্ঘ্যের ওপর সংবেদনশীল নয় অর্থাৎ সংকটকালের কম বা বেশি সময় আলো দিলে, কোনো ক্ষেত্রেই পুষ্প প্রস্ফুটন প্রভাবিত হয় না, তাদের দিবা – নিরপেক্ষ উদ্ভিদ বলে। উদাহরণ – শশা, ভুট্টা। এই সব উদ্ভিদের ফুল সারা বছরই ফুটতে পারে।
হ্রস্ব – দীর্ঘ দিবা উদ্ভিদঃ যে সব উদ্ভিদের ফুল ফোটার জন্য প্রথমে সংকট আলোর চেয়ে কম আলো এবং শেষের দিকে সংকট আলোককালের চেয়ে বেশি সময়কাল ধরে আলোর প্রয়োজন তাদের হ্রস্ব – দিবা উদ্ভিদ বলে। উদাহরণঃ ট্রাইফোলিয়াম।
দীর্ঘ – হ্রস্ব দিবা উদ্ভিদঃ অনেক উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ফুল ফোটার জন্য প্রথমে দীর্ঘ – দিবা ও পরে হ্রস্ব – দিবার প্রয়োজন হয়, এদের দীর্ঘ – হ্রস্ব দিবা উদ্ভিদ বলে। উদাহরণঃ হাসনাহানা।
অন্তর্বতী দিবা উদ্ভিদঃ যে সব উদ্ভিদে পুষ্প প্রস্ফুটনের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিসরের দিবা – দৈর্ঘ্য প্রয়োজন, তাদের অন্তবর্তী দিবা উদ্ভিদ বলে। এই নির্দিষ্ট পরিসরের থেকে দিবা দৈর্ঘ্য কম বা বেশি হলে ফুলের পরিস্ফুটন হয় না। উদাহরণ – Wild Kidney bean।
ফটোপিরিয়ডের গুরুত্ব
১) ফসলি উদ্ভিদে ফটোপিরিয়ড প্রয়োগ করে ফুল আসার সময় কমিয়ে একই সময়ে মোট ফলনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়।
২) গ্রন্থিকান্ড, স্ফীতকন্দ উৎপাদনকারী উদ্ভিদে ফুল আসার সময় বিলম্বিত করে অধিক অঙ্গজ বৃদ্ধি ঘটিয়ে গ্রন্থিকান্ড ও স্ফীতকন্দের উৎপাদন বাড়ানো যায়।
৩) গ্রিনহাউসে জন্মানো উদ্ভিদে উপযুক্ত দিবা – দৈর্ঘ্য প্রয়োগ করে সারা বৎসর ফুল উৎপাদন সম্ভব। এই পদ্ধতিকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাজে লাগিয়ে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ফুল বা অন্যান্য সবজি সরবারাহ করা যায়।
৪) ফটোপিরিয়ড প্রয়োগ করে উদ্ভিদের অঙ্গজ বৃদ্ধি ঘটানো যায়।
৫) সময়োচিত ফসল উৎপাদন, ফুল ও ফলের বাগান তৈরিতে সঠিক সময়ে জমি প্রস্তুতির জন্য ফটোপিরিয়ড সম্পর্কিত জ্ঞান খুবই ফলপ্রসূ।
৬) উদ্ভিদ প্রজননবিদগণ ফটোপিরিয়ড জ্ঞান, সংকরায়ণ পরীক্ষায় কাজে লাগিয়ে সময় উপযোগী ব্রিড তৈরি করতে পারেন।
৭) ফটোপিরিয়ড প্রয়োগ করে বিপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির বিস্তার ও অস্তিত্ব বজায় রাখা সম্ভব।
৮) পরিবেশের বাহ্যিক প্রভাবক যে উদ্ভিদদেহে শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটাতে পারে ফটোপিরিয়ড তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।