প্রকৃতি ও সমাজ অনুসন্ধান

এই শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা প্রথমে নিজ এলাকার কয়েকটি প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান নির্ণয় করব। এরপর দুটো ভিন্ন ভূ-প্রকৃতি ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট নির্ণয় করে বিশ্লেষণ করব। প্রেক্ষাপট দুটোর উপর প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের প্রভাব চিহ্নিত করব। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে অনুসন্ধান করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানব। এরপর আমরা নিজ এলাকার ইতিহাস ও সামাজিক প্রেক্ষাপট তৈরিতে প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের প্রভাব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে অনুসন্ধান করব। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ফলাফল একটি সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে উপস্থাপন করব। এরপর মুক্ত আলোচনায় শিক্ষক ও সহপাঠীর কাছ থেকে মতামত নিয়ে এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান সংরক্ষণে মানুষের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে করণীয় নির্ধারণ করব।

প্রকৃতি ও সমাজের প্রভাব

আমরা এখন বাংলাদেশের দুটি ভিন্ন ভৌগলিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যের দুজন মানুষের গল্প পড়ি। এই দুটি গল্প থেকে আমরা দুটি ভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান নির্ণয় করব। এই দুটি অঞ্চলের ঐতিহাসিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট খুঁজব।

সমুদ্রের বুকে জব্বার হোসেন

জব্বার হোসেনের জন্ম সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায়। সমুদ্রে মাছ ধরে এবং হাটে মাছ বিক্রি করেই তার জীবন চলে যায়। বাড়িতে আছে স্ত্রী ও তিন সন্তান।

জব্বার হোসেন স্বপ্ন দেখেন তার সন্তানেরা পড়াশোনা করে শিক্ষিত হবে। হাঁট বাজারে মাঝে মাঝে শহর থেকে আসা মানুষদের দেখতে পান। তারা মাছ কিনে নিয়ে যান। তাদের ভাষাও জেলেদের মতো না।

দাদার কাছ থেকে শুনেছেন, এখানে নাকি একসময় জাহাজও আসত। এখান থেকে লবণ, জামাকাপড় এসব জাহাজে করে বিভিন্ন দেশে নিয়ে যেত। জাহাজে বিদেশি মানুষেরাও  আসত।

শহরের লোকেরা অনেক সময় শার্ট, প্যান্ট ও কোট পরে আসে। তা জব্বার হোসেনের ভালো লাগে। স্ত্রীকে জানান এবার কিছু টাকা জমলে দর্জির কাছ থেকে শার্ট, প্যান্ট, কোট বানিয়ে নিবেন। তার এই কথা শুনে স্ত্রী হাসেন। এই জামাকাপড় পরে আপনি কই যাবেন? জব্বার সাহেব ভাবেন সত্যিই তো এটা পরে তিনি কোথাও যেতে পারবেন না। এমনকি এই পোশাকে তিনি সমুদ্রেও ঝাঁপ দিতে পারবেন না। তিনি বুঝলেন, না লুঙ্গির মতো আরামদায়ক পোশাক আর কোনোটাই হয় না। একটু গুঁজে দিলেই হলো, কাজে লেগে পড়া যায়। আবার ভিজে গেলে বাতাসে খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়েও যায়।

জব্বার হোসেনের ছোটো ছনের ঘর মাঝে মাঝে সমুদ্রের ঝড়ে ভেঙে যায়। এগুলো ঠিক করতে তখন বেশ কষ্ট করতে হয়। তারপরও আগের চেয়ে অবস্থা এখন অনেক ভালো। মায়ের কাছ থেকে শোনা এক সময় নাকি বড়ো বড়ো ঝড়ে অনেক মানুষ মারা যেত। এরকমই এক ঝড়ের সময় মা তার এক ছোটোবোনকে হারিয়েছেন। এখন সমুদ্রে এরকম বড়ো ঝড়ের আশঙ্কা হলে তারা বিপদসংকেত পান। স্ত্রী সন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন।

জব্বার হোসেনের জীবন যেন এই সমুদ্রেই। সন্তানরা যেখানেই যাক তিনি এই সমুদ্রেই মরতে চান। মাঝে মাঝে সমুদ্রের পানির উপর মাছের ট্রলারে গা ভাসিয়ে দিয়ে জোরগলায় গান ধরেন।

আজ অন্বেষার বিয়ে

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে বড়ো হয়েছে অন্বেষা সাংমা। চারিপাশে গাছপালা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সব সময় তাকে আগলে রেখেছে। আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারছে না। বেশ সেজে ফেলেছে আজ। নিজের রুমটি পরিপাটি করে গুছিয়েছে। পুরোনো কিছু জিনিসপত্রও সরিয়েছে। বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে উঠবে এখানেই।

বাড়িভর্তি মানুষ। সবার আগ্রহ নতুন বরকে দেখার। তাছাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরা প্রস্তুতি নিচ্ছে বিয়ের অনুষ্ঠানে গান ও নাচ পরিবেশন করবে। বিভিন্ন খাবারের আয়োজনও করা হয়েছে। কিন্তু অন্বেষা কেন যেন সবার মতো মজা করতে পারছে না। চিন্তা হচ্ছে নতুন জীবনের সব কিছু কীভাবে শুরু করবে?

হঠাৎ মা অন্বেষার ঘরে ঢুকে বললেন, নতুন জামাইকে বাইরে কাজ করতে হবে। তাদের জমিজমা দেখেশুনে রাখতে হবে। তাই বিয়ের পরদিনই মেয়ের জামাইকে নিয়ে তিনি চাষাবাদের সম্পত্তি দেখিয়ে দিতে চান। অন্বেষার একটু রাগ হলো। মাকে একটু কড়া করেই বলল, মা একজন মানুষ প্রথম আমাদের সঙ্গে এসে থাকবে। বিয়ের পরদিনই তুমি তাকে কাজে পাঠিয়ে দেবে মায়ের উত্তর, কী করব বলো আমার সব সম্পদই তো তোমার। তুমি যদি বরকে পরিশ্রমী না করে তোলো, বর তো আলসে হয়ে যাবে।

অন্বেষা মায়ের কথা মেনে নিল। তারপর কথা ঘুরিয়ে বলল, মা কেমন লাগছে আমাকে? মা এবারও কিছুটা মলিন দৃষ্টিতে বললেন, আমি ভেবেছিলাম তুমি দকমান্দা (ঐতিহ্যবাহী পোশাক) পরবে। অন্বেষা বলল, মা এখন তো তেমন কেই এই পোশাকে বিয়ে করে না। মা বললেন, আমি ভেবেছিলাম তুমি সবার মতো না। অন্বেষা বলল, মা আমি সামনের সবগুলো অনুষ্ঠানে দকমান্দা পরব। বিয়ে তো একবারই হয়, এই একটা দিন আমার মতো করে একটু সাজি। মা আর কিছু না বলেই চলে গেলেন।

অন্বেষার অনেক দিন পর আজ কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে। তার একটি ডায়েরি আছে, সেখানে তার বিশেষ মুহূর্তগুলো লিখে রাখে। কিন্তু যখনই লিখতে বসে, তার নিজের ভাষায় লিখতে পারে না। কারণ, গারো ভাষার লেখার জন্য বর্ণমালা নেই। আহা! যদি নিজের ভাষায় লেখা যেত। তারপরও সে লিখবে যে ভাষা স্কুলে, কলেজে শিখেছে, সেই বাংলা ভাষাতেই। ডায়েরি খুলতেই অন্বেষার নানির কথা মনে পড়ছে। নানির অনেক ইচ্ছা ছিল তার বিয়ে দেখার। বিয়েতে রে-রে গানসহ নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলো। গারো সম্প্রদায়ের রীতি অনুসারে ভিন্ন গোত্রের ছেলেকে বিয়ে করতে হয়। মিন্টুও ভিন্ন গোত্রের।

ছোটোবেলায় অন্বেষা একদিন নানিকে জিজ্ঞেস করল, নানি তুমি নানাকে কী উপহার দিয়েছ বিয়েতে? নানি তাকে একটি আংটি দেখিয়ে বললেন এটা উপহার দিয়েছিলাম। অন্বেষা বললো, এটা তো অনেক সুন্দর। নানি বলল, তোমার বিয়েতেও তোমার বরকে এই আংটি দিলে কেমন হয়? সেদিন খুব লজ্জা পেয়েছিল অন্বেষা। আজ নানির দেওয়া সেই আংটি দিয়েই সে চার্চে বরকে গ্রহণ করবে তার জীবনে।

জেলে সম্প্রদায়ের প্রাকৃতিক উপাদান সমুদ্র যার মাধ্যমে জাহাজে করে মালামাল দেশ-বিদেশে পাঠানো হয়। সেই সঙ্গে এই সমুদ্র জেলেদের পেশা, ভাষা, গান ও উৎসব উদযাপনকেও প্রভাবিত করে। এভাবে প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ও ইতিহাস সেই অঞ্চলের প্রকৃতি ও সমাজের উপাদান দ্বারা প্রভাবিত।

আমরা এখন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ধাপ অনুসরণ করে আমাদের চারপাশের মানুষের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান কীভাবে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট তৈরি করে, তা জানার চেষ্টা করব। এ জন্য আমরা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতি সম্পর্কে জানব। এই পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা শিখব। চলো, তাহলে আমরা এই পদ্ধতি বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে জেনে নিই। এখানে আমরা নমুনাস্বরূপ নিজ এলাকার সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন কীভাবে অনুসন্ধান করব তার বিভিন্ন ধাপগুলো দেখানো হলো:

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতির ধাপ

ধাপধাপটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনাউদাহরণ
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধানের জন্য বিষয়বস্তু নির্ধারণ করাবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধানের জন্য বিষয়বস্তু নির্ধারণ করব।আমার এলাকার সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন
আমার এলাকা
সময়সামাজিক উপাদান যেমন: রাস্তাঘাট
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধানের জন্য প্রশ্ন তৈরি করাবিষয়বস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য একাধিক প্রশ্ন তৈরি করব।১. আমাদের এলাকার আগে রাস্তাঘাট কেমন ছিল?
২. আমাদের এলাকার বর্তমান রাস্তাঘাট এখন কেমন?
তথ্যের উৎস নির্বাচন করাবিজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য কোথা থেকে সংগ্রহ করতে পারি তা নির্বাচন করতে হবে।এলাকার রাস্তাঘাটের আগের ও বর্তমানের অবস্থা জানার জন্য এলাকার বয়স্ক লোক নির্ধারণ করব। আমরা কতজনের কাছ থেকে তথ্য নেব তা-ও নির্ধারণ করব।
এছাড়া বই, জার্নাল, ম্যাগাজিন, মিউজিয়াম ইত্যাদি উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারব।
তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নির্ধারণতথ্য সংগ্রহের জন্য আমরা দলীয় আলোচনা / সাক্ষাৎকার / পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারি।এলাকার রাস্তাঘাটের পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার জন্য প্রশ্নমালা তৈরি করে সাক্ষাৎকার নেওয়া পদ্ধতি নির্ধারণ করব।
সময় ও বাজেট নির্ধারণঅনুসন্ধানী কাজ পরিচালনার জন্য আমাদের কোনো অর্থের প্রয়োজন আছে কিনা এবং কতটুকু সময় লাগতে পারে তা নির্ধারণ।অনুসন্ধানী কাজ পরিচালনার জন্য কোনো অর্থের প্রয়োজন হবে কি না, তা নির্ধারণ করব। যদি অর্থের প্রয়োজন হয়, নূন্যতম কত টাকার মধ্যে আমরা অনুসন্ধানী কাজটি করব, তার একটি হিসাব তৈরি করব।
অনুসন্ধানী কাজটি কত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করব তারও পরিকল্পনা করব।
তথ্য সংগ্রহ করাএই ধাপে নির্বাচিত তথ্যের উৎস ও তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি অবলম্বন করে তথ্য সংগ্রহ করব।
তথ্য সংগ্রহের সময় আমরা টেপ রেকর্ডার ব্যবহার বা খাতায় নোট করে রাখতে পারি। তবে অবশ্যই তথ্যদাতার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এই কাজটি করতে হবে।
এলাকার রাস্তাঘাটের পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার জন্য বয়স্ক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রশ্নমালার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করব।
 তথ্য বিশ্লেষণ করাসংগৃহীত তথ্য পড়তে হয়, প্রয়োজনীয় তথ্যের মধ্যে যেগুলো প্রয়োজনীয় তথ্য তা নির্বাচন করতে হয় এবং সাজাতে হয় অথবা হিসাব নিকাশ করে গ্রাফ বা চার্ট আকারে প্রকাশ করতে হয়।তথ্যদাতার প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে তথ্য প্রদান করেন। তিনি অপ্রাসঙ্গিক অনেক তথ্য দিতে পারেন। তাই আমরা অনুসন্ধানের বিষয়বস্তুর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক তথ্য খুঁজে বের করে সাজাব।
ফলাফল ও সিদ্ধান্ত গ্রহণতথ্য বিশ্লেষণ করে যে উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়, সেটাই অনুসন্ধানী পদ্ধতির ফলাফল। এই ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।আমরা আমাদের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে এলাকার রাস্তাঘাট আগের ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে যে উত্তর পাব, সেটিই হচ্ছে আমাদের অনুসন্ধানী পদ্ধতির ফলাফল। এই ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব আমাদের এলাকার রাস্তাঘাটের কী রকম পরিবর্তন হয়েছে।
ফলাফল অন্যদের সঙ্গে উপস্থাপন ও শেয়ার করাআমরা আমাদের ফলাফল গ্রাফ পেপার, পোষ্টার, নাটিকা, ছবি, চার্ট ইত্যাদি উপায়ে উপস্থাপন করতে পারি। এছাড়া ম্যাগাজিননে বা ক্লাসে প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে পারি।আমরা আমাদের সংগৃহীত তথ্য থেকে এলাকার রাস্তাঘাট আগে কেমন ছিল এবং বর্তমানে কেমন সেটা তুলে ধরতে একটি ছোটো প্রতিবেদন লিখতে পারি। এছাড়াও ছবি এঁকে বা পোস্টারে লিখে বা ছোটো গল্প আকারে মৌখিক উপস্থাপন করতে পারি।

যে ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করব, তাঁকে তথ্যদাতা বলা হয়। তথ্য সংগ্রহের সময় তথ্যদাতা বা উত্তরদাতার কাছ থেকে সম্মতি নিতে হয়। যদি তথ্যদাতার বক্তব্য আমরা রেকর্ড করি, তা-ও তাঁকে সাক্ষাৎকার গ্রহণের পূর্বে বলতে হবে। তাহলে চলো, আমরা তথ্য গ্রহণের সময় করণীয় কয়েকটি নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিই।

তথ্যগ্রহণের সময় করণীয়

১. অবশ্যই উত্তরদাতার কাছ থেকে সম্মতি নিতে হবে।

২. যদি তথ্যদাতার কথা রেকর্ড করতে হয়, সেটার জন্য অনুমতি নিতে হবে।

৩. তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখতে হবে কিনা তা জেনে নিতে হবে।

৪. তথ্যদাতাকে জানিয়ে রাখতে হবে সংগৃহীত উত্তর শুধু তাদের এই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতিতে ব্যবহার করবে। অন্য কোনো উদ্দেশ্য নয়।

৫. কতটুকু সময় লাগতে পারে তা উত্তরদাতাকে জানাতে হবে। তিনি সেই সময় দিতে পারবেন কি না, তা জেনে নিতে হবে।

৬. তথ্যদাতা যদি উত্তর দেওয়ার কোনো এক সময় উত্তর প্রদান করতে অনিচ্ছা প্রদর্শন করেন, সে মুহূর্তেই প্রশ্ন করা বন্ধ করে দিতে হবে।

৭. উত্তর দাতার উত্তর ঠিক না ভুল হয়েছে এ ধরনের কোনো কথা না বলা। যেন উত্তরদাতা সম্পূর্ণ নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন।

প্রশ্নমালা তৈরি

তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রশ্নমালা তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে নিজ এলাকার সামাজিক উপাদান আগে কেমন ছিল এবং সামাজিক উপাদান এখন কেমন, সে বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে। নিচে কয়েকটি প্রশ্ন সংবলিত একটি প্রশ্নমালা দেওয়া হলো।

এলাকার সামাজিক উপদানের পরিবর্তন

১. আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট ৩০ বছর আগে কেমন ছিল?

২. আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট এখন কেমন?

৩. এলাকার বাড়িঘর ৩০ বছর আগে কেমন ছিল?

৪. এলাকার বাড়িঘর এখন কেমন?

৫. … … … … …

৬. … … … … …

তথ্যে উৎস (তথ্যদাতা/উত্তরদাতা নির্ণয়)

তথ্যদাতার নির্ণয়ের সময় লক্ষ্য রাখব:

১. তথ্যদাতা প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম কি না। তিনি সেই বিষয় সম্পর্কে যথাযথভাবে জানেন কি না।

২. আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নিজ বয়স বা আয় সম্পর্কে তথ্যদাতা উত্তর দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। সেক্ষেত্রে আমরা সরাসরি তথ্যদাতার বয়স বা আয় জিজ্ঞেস না করে একটু কৌশলী হতে পারি। যেমন: অতীতের কোনো ঘটনা সম্পর্কে জানার জন্য ঐ সময় তথ্যদাতা কোথাও পড়াশোনা করতেন কি না, অথবা তখন তার বন্ধু বা খেলার সাথিরা কী করতেন তা জানতে পারি। এভাবে জিজ্ঞেস করে তথ্যদাতার বয়স সম্পর্কে ধারণা নিতে পারি। এ ধারণা থেকে আমরা হয়তো বুঝতে পারব, ঐতিহাসিক বিষয়ে তথ্য দেওয়ার মতো উপযুক্ত বয়স তখন তথ্যদাতার ছিল কি না।

তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি

তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়। যেমন: সাক্ষাৎকার, দলীয় আলোচনা, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি।

আমরা এই তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে জানব।

চলো, এখন তাহলে আমরা নবম শ্রেণির এক বন্ধু রাজু কীভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে তার এলাকার সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন অনুসন্ধান করল তা জেনে নিই।

রাজুর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতি

রাজ নিজ এলাকার সামাজিক উপাদানের পরিবর্তনকে তার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু হিসেবে নির্ধারণ করল। এরপর সে সামাজিক উপাদান হিসেবে তার এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, যানবাহনের পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করল। সে ঠিক করল, এলাকার ২০ বছর আগের সামাজিক উপাদানগুলো কেমন ছিল এবং বর্তমান কেমন তা জানবে। এই দুই অবস্থা সম্পর্কে জেনে সে পরিবর্তনগুলো নির্ণয় করবে। তাই সে এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও যানবাহনের পরিবর্তন সম্পর্কিত প্রশ্ন সংবলিত একটি প্রশ্নমালা তৈরি করল।

সে এলাকার চারজন বয়স্ক ব্যক্তির কাছে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করল। তথ্য সংগ্রহের সময় করণীয় সব নীতিমালা সে অনুসরণ করল। চারজন ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করল। তথ্য বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করল।

রাজুর লেখা প্রতিবেদন দেখতে ইচ্ছা করছে? চলো, তাহলে প্রতিবেদনটি দেখে নিই। এই প্রতিবেদনের মতো করে একটি প্রতিবেদন আমরাও লিখব।

প্রতিবেদন             তারিখ: ২৪/০১/২০২৪

অনুসন্ধানের বিষয়: আমার এলাকার সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন।

অনুসন্ধানের জন্য প্রশ্ন: আমার এলাকার সামাজিক উপাদান ২০ বছর

আগে কেমন ছিল? আমার এলাকার সামাজিক উপাদান বর্তমানে কেমন?

তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি: আমি সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করেছি। এজন্য চারজন বয়স্ক ব্যক্তিকে নির্বাচন করেছি। প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময নিয়ে প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তর সংগ্রহ করেছি।

উত্তর সংগ্রহের সময় তথ্যদাতার কাছ থেকে সম্মতি নিয়েছ। তথ্য সংগ্রহের জন্য কিছু প্রশ্ন তৈরি করেছি। প্রশ্নগুলো ছিল এলাকার ২০ বছর আগের ও বর্তমানের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও যানবাহনের অবস্থা সম্পর্কিত।

তথ্য বিশ্লেষণ: সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে পেয়েছি এলাকার ২০ বছর আগে কাঁচা রাস্তা ছিল যা বৃষ্টির সময় কর্দমাক্ত হতো। ১০ বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উদ্যোগে রাস্তা পাকা করা হয়। এখন জেলা শহরের সঙ্গে আমার এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। অন্যদিকে ২০ বছর আগে এলাকার  অধিকাংশ বাড়ি চিল টিনসেডের, বর্তমানে বেশিরভাগ বাড়ি দুইতলা বা তিনতলা বিশিষ্ট। সেই সঙ্গে, ২০ বছর আগে যেই যানবাহন ব্যবহার করত, এখন সেই একই ধরনের যানবাহন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু ইদানিং রিকশার ব্যবহার বেড়েছে।

ফলাফল: এলাকার সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন হয়েছে। রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরের ধরন পাল্টেছে এবং যানবাহন হিসেবে রিকশার চাহিদা বেড়েছে।

যৌক্তিক সিদ্ধান্ত: এলাকার সামাজিক উপাদান সময়ের সঙ্গে অপরিবর্তিত হয়েছে। এই পরিবর্তন সমাজের মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত করেছে।