প্রজ্ঞার বিকাশ কাকে বলে?

প্রজ্ঞার বিকাশ কাকে বলে?

প্রজ্ঞামূলক বিকাশের অর্থ হল প্রজ্ঞার ক্রমপর্যায়ের পরিবর্তন। প্রথমে প্রজ্ঞার অর্থ জানা প্রয়োজন। Cognition বা প্রজ্ঞা হল জানার বিভিন্ন প্রক্রিয়া। আমরা যেভাবে জানতে পারি বা জানার চেষ্টা করি, তাই হল প্রজ্ঞা। 

অর্থাৎ প্রজ্ঞা হল চিন্তন, যুক্তিকরণ, স্মরণক্রিয়া, প্রত্যক্ষণ, সমস্যা সমাধান ইত্যাদির সমন্বয়।

প্রজ্ঞার বিকাশ কিভাবে হয়?

প্রজ্ঞার বিকাশ কিভাবে হয় তা সুন্দরভাবে ব্যক্ত করেছেন জ্যাঁ পিয়াজেঁ (Jean Piaget)। পিয়াজেঁ বলেন, মানুষের চিন্তনের প্রাথমিক উপাদান হলো স্কিমা (Schema)। অর্থাৎ মানুষ স্কিমা দিয়েই চিন্তা করে বা কোনো কিছুকে বোঝার চেষ্টা করে। মানুষ যখন কোনো উদ্দীপকের মুখোমুখি হয় তখন সে তার স্কিমা দিয়ে সেই উদ্দীপককে বোঝার চেষ্টা করে। যখন সে উদ্দীপকটিকে বুঝতে পারে তখন বুঝতে হবে তার বর্তমান স্কিমাতে ঐ উদ্দীপক সংক্রান্ত তথ্য বা ধারণা রয়েছে, ফলে স্কিমার কোনো পরিবর্তন হয় না। কিন্তু যখন উদ্দীপককে বুঝতে পারে না তখন তার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয় এবং সে স্বাভাবিকভাবে ভারসাম্যে ফিরে আসতে চায়। এই ভারসাম্যে ফিরে আসার নীতিকে বলে ‘Equilibration Principle’ বা ভারসাম্যের নীতি। এই ভারসাম্যে ফিরে আসার জন্য যে প্রক্রিয়ার সাহায্য নেয়, পিয়াজেঁ তার নাম দিয়েছেন ‘Adaptation’ বা অভিযোজন।

মানুষ যখন তার বর্তমান স্কিমা দিয়ে পরিবেশের কোনো উদ্দীপককে সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারে না, তখন একটি মানসিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয় এবং সে অভিযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভারসাম্যে ফিরে আসে। অভিযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ মানসিক ভারসাম্যে ফিরে আসে এবং স্কিমার পবিরর্তন হয়। এই স্কিমার পরিবর্তনই স্কিমার বিকাশ। পিয়াজেঁর মতে, স্কিমার বিকাশের মাধ্যমেই মানুষের প্রজ্ঞার বিকাশ হয়।

পিয়াজেঁ চিন্তনের দুটি প্রবণতার কথা উল্লেখ করেছেন –

সংগঠন(organization) ও অভিযোজন(adaptation)।

সংগঠনঃ মানুষ জন্মসূত্রেই একটি প্রবণতা অর্জন করে যার দ্বারা সে তার চিন্তন প্রক্রিয়াকে সংগঠিত করে মানসিক কাঠামোতে অন্তর্ভূক্ত করে। এই কাঠামোর সাহায্যেই আমরা পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করি এবং পরিবেশ বুঝতে চেষ্টা করি। এই কাঠামোর নাম পিয়াজেঁ স্কিমা বলে উল্লেখ করলেন।

অভিযোজনঃ মানুষের অপর একটি প্রবণতা হল – অভিযোজন অর্থাৎ পরিবেশের সাথে সঙ্গতিবিধান করা। এই অভিযোজন দুভাবে হয় – প্রথমটি হল আত্তীকরণ ও দ্বিতীয়টি সহযোজন।