ব্যাকরণ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি?

পাঠ শেষে আমরা জানবো, ব্যাকরণ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি? ব্যাকরণ কাকে বলে? ব্যকারণ কত প্রকার ও কি কি? বাংলা ব্যাকরণের মুখ্য আলোচ্য বিষয় এবং ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব।

ব্যাকরণ কাকে বলে?

ব্যাকরণ হলো ভাষা ব্যবহারের জন্য নিধারিত বিধির সমষ্টি যা ভাষার ধ্বনি ব্যবস্থা, শব্দ তথা রূপের গঠন, বাক্যিক বিন্যাস এবং বাগর্থকে বর্ণনা করে। ব্যাকরণকে অনুশাসনমূলক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করার রীতি দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত থাকলেও আধুনিক দৃষ্টিতে ব্যাকারণ মূলত বর্ণনামূলক। 

অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট ভাষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কোনো বিধি কেন প্রাসঙ্গিক  তার বর্ণনামূলক ব্যাখ্যা প্রদান করাই ওই ভাষার ব্যাকরণের লক্ষ্য। সুতরাং বাংলা ভাষার ব্যাকরণের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো: এই ভাষার ধ্বনিব্যবস্থা কীরূপ তা বর্ণনা করা, বাংলা ভাষার রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যসমূহ শনাক্ত করা, বাংলা বাক্য বিন্যাসের কৌশল ও  প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা এবং সর্বোপরি ধ্বনি রূপ ও বাক্যের বাগর্থ সংগতি নির্ধারণ করা।

সুতরাং বলা যায়, ভাষার মূল কাজ হলো ভাষার সংগঠন বিশ্লেষণ। ব্যাকরণ শব্দটির ব্যুৎপত্তি বিবেচনা করলেও এই উদ্দেশ্যই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কেননা, ব্যাকরণ শব্দটির মূল অর্থ হলো ‘বিশেষভাবে বিশ্লেষণ’। শব্দটির গঠন হলো: বি-আ+কৃ+অন।

ব্যাকরণ অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে যে বিষয়গুলো আয়ত্ত করা যায় তা হলো:
ক) ভাষার ধ্বনি, রূপ বাক্য এবং বাগর্থের গঠন-প্রকৃতি সম্পর্কে শেখা।
খ) উল্লিখিত সকল উপাদানের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারা।
গ) ভাষার প্রমিত ব্যবহারের সামর্থ্য অর্জন করা।

ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে বিদ্যার দ্বারা কোনো ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া তাহার স্বরূপটি আলোচিত হয় এবং সেই ভাষার গঠনে ও লিখনে এবং তাহাতে কথোপকথনে শুদ্ধ-রূপে তাহার প্রয়োগ করা যায়, সেই বিদ্যাকে সেই ভাষার ব্যাকরণ বলে।

ব্যাকরণ সম্পর্কে ডক্টর সুকুমার সেন, “যে বইয়ে ভাষার বিচার ও বিশ্লেষণ আছে, তা-ই ব্যাকর।”

ব্যাকরণ কত প্রকার ও কি কি?

ব্যাকরণ চার প্রকার। যথাঃ

১) বর্ণনাত্মক ব্যাকরণ
২) ঐতিহাসিক ব্যাকরণ
৩) তুলনামূলক ব্যাকরণ এবং
৪) দার্শনিক বিচারমূলক ব্যাকরণ

বাংলা ব্যাকরণের মুখ্য আলোচ্য বিষয়

ব্যাকরণ নির্দেশিত বিভিন্ন বিধি ও সূত্র ভাষায় কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তাও পরোক্ষভাবে ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়। এ কারণে ভাষার প্রয়োগরীতি এবং নির্মিতি অধ্যয়নও আয়ত্তীকরণের অংশ। নিচে বাংলা ব্যাকরণের মুখ্য আলোচ্য বিষয়সমূহ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

বাংলা ধ্বনিতত্ত্বঃ এর মূল কাজ হলো বাংলা ভাষার ধ্বনি ব্যবস্থার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ করা। বাংলা স্বরধ্বনি উচ্চারণের মাপকাঠিসমূহ, ব্যঞ্জনধ্বনিসমূহের উচ্চারণস্থান ও উচ্চারণরীতি, অর্ধস্বর, যৌগিকস্বর, অক্ষর ও অক্ষরায়ণ, ধ্বনি-পরিবর্তনসূত্র প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করাই বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব্রে লক্ষ্য।

বাংলা রূপতত্ত্বঃ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দের উৎপত্তি, শব্দের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রূপমূলের গঠন বিন্যাস এবং শব্দের বিবিধ প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করাই বাংলা রূপতত্ত্বের মূল কাজ। বাংলা ভাষায় যেসব শব্দ রয়েছে তাদের উৎস ও ব্যুৎপত্তি নির্দেশ করা, এসব শব্দের অন্তর্গত রূপমূল বা রূপমূলসমূহ কীভাবে বিন্যস্ত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করা এবং বাংলা শব্দের প্রায়োগিক বৈশিষ্ট্যসমূহ চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে বাংলা রূপতত্ত্বের আলোচনার পরিধি নির্দেশিত হয়।

বাংলা বাক্যতত্ত্বঃ বাংলা বাক্যের গঠনবৈশিষ্ট্য, পদক্রম, বাক্যাংশ ও পদের গঠন, কারক-বিভক্তির প্রয়োগ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করে এ ভাষার বাক্যতত্ত্ব। একই সঙ্গে ক্রিয়ার কাল, ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের কর্তা ও কর্মের সম্বন্ধ, উক্তি পরিবর্তন এবং বাচ্য বিষয়েও আলোকপাত করে বাক্যতত্ত্ব।

বাংলা বাগর্থতত্ত্বঃ বাংলা ধ্বনি অর্থদ্যোতকতা এবং বাংলা শব্দ ও বাক্যের অর্থবাচকতা নিয়ে আলোচনা করে বাংলা বাগর্থতত্ত্ব। এরই অংশ হিসেবে অভিন্ন বিভিন্ন শব্দ এবং একই শব্দের বিভিন্ন প্রকার অর্থ নিয়েও আলোকপাত করে বাগর্থতত্ত্ব।

ব্যাকরণ পাঠের গুরুত্ব

ভাষা শিখনে ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। একটি ভাষা যথাযথভাবে শিখতে হলে একজন ভাষীর চারটি দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এগুলো হলো: কথন, পঠন, লেখন ও শ্রবণ। বাংলা ভাষা বাংলাদেশের অধিকাংশ অধিবাসীর মাতৃভাষা হওয়ায় কথন (যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাষার কথন) ও শ্রবণ দক্ষতা একজন শিশু তার চারপাশের পরিবেশ থেকেই অর্জন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু লেখন ও পঠন দক্ষতা এবং প্রমিত বাংলায় কথন দক্ষতা অর্জনের জন্য বাঙালি শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে এমন অনেক অধিবাসী আছে যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়; তাদের বাংলা ভাষা শেখার ক্ষেত্রে উল্লিখিত চারটি দক্ষতাই আনুষ্ঠনিক পরিবেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সূত্রে অর্জন করতে হয়। এই প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা আয়ত্ত করার ক্ষেত্রে ব্যাকরণ পাঠের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ব্যাকরণ যথাযথভাবে অধ্যয়ন করতে সক্ষম হলে শিক্ষার্থীরা প্রমিত বাংলা উচ্চারণ কথা বলতে শিখবে; ব্যাকরণের নিয়মসমূহ আয়ত্ত করার ফলে তাদের গঠন যথার্থ হবে; তারা নির্ভুলভাবে বাংলা ভাষা শিখতে পারবে এবং বাংলা ভাষা শুনে বুঝতে পারবে।