ভোল্টেজ কাকে বলে? একক, সূত্র, প্রকারভেদ ও ব্যবহার

ভোল্টেজ কাকে বলে? ভোল্টেজ এর সংজ্ঞা

ভোল্টেজ (Voltage) হলো এক ধরনের বৈদ্যুতিক চাপ। পরিবাহীর অভ্যন্তরে থাকা ইলেকট্রনসমূহকে স্থানচ্যুত করতে যে চাপের (Force) প্রয়োজন হয় তাকে ভোল্টেজ বলে। ভোল্টেজ এর প্রতীক হলো V।

ভোল্টেজ এর একক কি?

ভোল্টেজ এর একক হলো ভোল্ট (Volt)। ভোল্ট এর নামকরণ করা হয়েছে ইতালীয় বিজ্ঞানী আলেসান্দ্রো ভোল্টা’র নামানুসারে, যিনি সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক ব্যাটারি আবিষ্কার করেন।

ভোল্টেজ এর সূত্র কি?

ওহমের সূত্র: V = IR

  • V = ভোল্টেজ (ভোল্টে)
  • I = কারেন্ট (অ্যাম্পিয়ার)
  • R = প্রতিরোধ (ওহম)

এই সূত্রটি বলে যে একটি পরিবাহীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট (I) পরিবাহীর দুই প্রান্তের মধ্যে বিদ্যমান ভোল্টেজ (V) এর সমানুপাতিক এবং পরিবাহীর প্রতিরোধের (R) ব্যস্তানুপাতিক।

ভোল্টেজ কত প্রকার ও কি কি?

ভোল্টেজ দুই প্রকার। যথাঃ ডিসি ভোল্টেজ এবং এসি ভোল্টেজ।
ডিসি ভোল্টেজঃ এই ধরনের ভোল্টেজের মাত্রা এবং দিক স্থির থাকে। ব্যাটারি থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ DC ভোল্টেজের উদাহরণ।
এসি ভোল্টেজঃ এই ধরনের ভোল্টেজের মাত্রা এবং দিক ক্রমাগত পরিবর্তন হয়ে থাকে। এটি আমাদের ঘরে ব্যবহৃত সাধারণ বিদ্যুৎ।

ভোল্টেজ ড্রপ কি?

ভোল্টেজ ড্রপ হল একটি বৈদ্যুতিক সার্কিটে প্রবাহিত বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে ভোল্টেজের একটি হ্রাস। মনে করুন, আপনি একটি বাড়ির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পানি পাইপের মাধ্যমে পানি পাঠাচ্ছেন। পাইপের ভেতরে ঘর্ষণের কারণে পানির চাপ কিছুটা কমে যাবে। ঠিক একইভাবে, একটি বৈদ্যুতিক তারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার সময়, তারের প্রতিরোধের কারণে ভোল্টেজ কিছুটা হ্রাস পায়। এই হ্রাসকেই ভোল্টেজ ড্রপ বলে।

ভোল্টেজ কিভাবে পরিমাপ করে?

ভোল্টেজ পরিমাপ করা হয় ভোল্টমিটারের সাহায্যে। তবে মাল্টিমিটারের সাহায্যেও ভোল্টেজ পরিমাপ করা যায়। এটির সাহায্যে ভোল্টেজ, তড়িৎ প্রবাহ ও রোধ উভয়ই পরিমাপ করা যায়। ভোল্টমিটারের দুটি প্রান্তকে বৈদ্যুতিক উৎসের সাথে সমান্তরালে সংযুক্ত করে ভোল্টেজ পরিমাপ করা হয়। নিচে চিত্রের সাহায্যে ঘটনাটি দেখানো হলো।

ভোল্টেজ কাকে বলে

ভোল্টেজ এর ব্যবহার

১) ঘরবাড়ি, অফিস, শিল্প কারখানা ইত্যাদিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ভোল্টেজ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালাতে, আলো জ্বালাতে, কম্পিউটার চালাতে ইত্যাদির জন্য ভোল্টেজের প্রয়োজন।
২) সকল ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, যেমন মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর ইত্যাদি চালাতে ভোল্টেজের প্রয়োজন।
৩) বিভিন্ন ধরনের মোটর, যেমন ফ্যান, পাম্প, কম্প্রেসর ইত্যাদি চালাতে ভোল্টেজ ব্যবহৃত হয়।
৪) বাল্ব, টিউবলাইট, এলইডি ইত্যাদি আলো জ্বালাতে ভোল্টেজের প্রয়োজন।
৫) গাড়ি, মোটরসাইকেল ইত্যাদি চালাতে ভোল্টেজ ব্যবহৃত হয়।
৬) ব্যাটারি থেকে ভোল্টেজ পাওয়া যায়, যা ইঞ্জিন চালু করতে, হেডলাইট জ্বালাতে, রেডিও চালাতে ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়।

ভোল্টেজ ডিভাইডার রুল কি?

ভোল্টেজ ডিভাইডার রুল (Voltage Divider Rule) বা বিভব বিভাজক নীতি কেবল শ্রেণি সমবায়ে যুক্ত বর্তনীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। “যে যন্ত্রের সাহায্যে একটি উচ্চমানের সরবরাহ ভোল্টেজ থেকে নিম্নমানের পরিবর্তনশীল ভোল্টেজ পাওয়া যায় তাকে বিভব বিভাজক বলে।

ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার

বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ সরবরাহকে স্থির রাখতে ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার সাহায্য করে। অনেক সময় দেখা যায় মেইন বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ভোল্টেজ আপ-ডাউন করে। যার ফলে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু একটি ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ এর আপ-ডাউনকে ইনপুট হিসেবে গ্রহণ করে আউটপুটে একটি স্থির মানের ভোল্টেজ প্রদান করে। যা দুর্ঘটনাকে সহজে রোধ করে।

আরো পড়ুনঃ

Leave a Comment