অর্থনীতির দশটি নীতি

১। মানুষ দেওয়া-নেওয়া করে (People Face Trade-Offs)

পছন্দমতো কোনো কিছু পেতে গেলে আমাদেরকে অবশ্যই পছন্দের অপর একটি জিনিস ত্যাগ করতে হয়। উদাহরণ দিয়ে বলি, তুমি যদি অর্থনীতি বিষয় পড়তে সব সময় ব্যয় কর তবে বাংলা বা ইংরেজি বিষয়ে পড়া থেকে তোমাকে বিরত থাকতে হবে। এরূপ তুমি যদি টিভি দেখ তবে খেলাধুলার পেছনে সময় ব্যয় করতে পারবে না। সরকার যদি বাজেটে সামরিক খাতে বেশি ব্যয় করে তবে শিক্ষাখাতসহ অন্যান্য বেসামরিক খাতে ব্যয় কমায়। অর্থাৎ সমাজে মানুষ একটি দেওয়া-নেওয়ার (Trade offs) বিকল্প অবস্থা বেছে নেয়।

২। সুযোগ ব্যয় (Opportunity Cost)

তুমি যদি স্কুলে লেখা পড়ার জন্য সময় ব্যয় কর তবে তুমি তোমার বাড়িতে তোমার বাবার কাজে সাহায্য করতে পারবে না। অথচ তুমি বাড়িতে কোনো একটি অর্থনৈতিক কাজ করলে তা থেকে তোমাদের পরিবার আর্থিকভাবে উপকৃত হতে পারত। কিন্তু সে সময় তুমি স্কুলে লেখাপড়া করছো। এখানে লেখাপড়া করার জন্য বাড়িতে কাজ করতে না পারা লেখাপড়ার সুযোগ ব্যয়।

৩। মানুষ প্রান্তিক পর্যায়ে চিন্তা করে (Rational People Think at the Margin)

মানুষ প্রান্তিক পর্যায়ে চিন্তা করে। বিয়েবাড়িতে খাওয়া শেষে তোমরা কেউ কেউ ভাবো আরো একটু খেতে পারতাম, আবার কেউ কেউ ভাবো আর একটু কম খেলে ভালো হতো। এই অল্প একটু বেশি বা অল্প একটু কম খাওয়া হচ্ছে প্রান্তিক খাওয়া। ধরো, তুমি একটি বিষয়ে A পেলে, তোমার মনে হবে আরেকটু পড়লেই A+ পেতে। মানুষ প্রান্তিক সুবিধা-অসুবিধার কথাও ভাবে। ধরো, তুমি পর পর তিনটি কলা খেলে। ৩ নম্বর কলাটি হলো প্রান্তিক কলা। প্রান্তিক কলা খেয়ে তুমি যে তৃপ্তি পেলে তার নাম প্রান্তিক উপযোগ। প্রান্তিক বা ৩ নম্বর কলাটি পেতে তুমি যত টাকা ব্যয় করলে তার নাম প্রান্তিক ব্যয়। যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে তুমি তখনই প্রান্তিক কলাটি খাবে যখন প্রান্তিক উপযোগ প্রান্তিক ব্যয়ের চেয়ে বেশি হবে।

৪। মানুষ প্রণোদনায় সাড়া দেয় (People Respond to Incentives)

প্রতিটি কাজের জন্য উৎসাহ বা প্রণোদনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষ প্রণোদনা পায় বলে কাজটি অধিকতর যত্নের সাথে করে। তোমার বাবা যদি বলেন তুমি পরীক্ষায় সোনালী A+ পেলে তিনি তোমাকে একটি সাইকেল কিনে দেবেন। নিশ্চয়ই তোমার ভেতরে পড়াশোনা করার উৎসাহ আরো বেড়ে যাবে। তেমনি অর্থনীতিতে শ্রমিক প্রণোদনা পেলে বেশি উৎপাদন করে।

৫। বাণিজ্যে সবাই উপকৃত হয় (Trade can Make Everyone Better-Off)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ড এবং জাপানের টয়োটা বিশ্বে গাড়ি ব্যবসায়ের জন্য অধিক পরিচিত দুটি কোম্পানী। কোম্পানী দুটির মধ্যে যথেষ্ট ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। কোম্পানী দুটি সাধারণ ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দাম যথাসাধ্য কমিয়ে বাজার দখল করতে চায়। ব্যবসায়িক কার্যক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হয়; অন্য দিকে মানুষও কম দামে গাড়ি কেনার সুযোগ পায়।

৬। অর্থনৈতিক কার্যক্রম সংগঠিত করার জন্য বাজার একটি উত্তম পন্থা (Markets are Usually a Good Way to Organize Economic Activities)

অর্থনৈতিক কাজকর্ম সংগঠিত হয়ে থাকে বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে। ফার্ম ও পরিবারসমূহের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলেই কোনো দ্রব্যের দাম নির্ধারিত হয়। ফার্মের মালিকরা বাজারের চাহিদা দেখে দ্রব্য সরবরাহ করে এবং অসংখ্য পরিবার তাদের আয় ও প্রয়োজন অনুসারে এ সমস্ত দ্রব্য ও সেবাসামগ্রী ক্রয় করে।

৭। সরকার কখনো কখনো বাজার নির্ধারিত ফলাফলের উৎকর্ষ সাধন করতে পারে (Governments Can Sometimes Improve Market Outcomes)

বাজার ব্যবস্থা ‘অদৃশ্য হাতের’ ইশারায় চলে। কিন্তু সব সময় ব্যাপারটি সঠিকভাবে হয় না। নানা কারণে অদৃশ্য হাত সঠিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। এমন অবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে। সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারে অপারগতা, পরিবেশ দূষণ এবং দুর্নীতির মতো বিষয়গুলো থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপের দরকার হয়।

৮। একটি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান নির্ভর করে সে দেশের দ্রব্য ও সেবা উৎপাদনের ক্ষমতার উপর (A Country’s Standard of Living Depends on Its Ability to Produce Goods and Services)

যেসব দেশের মানুষের দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন করার ক্ষমতা বেশি তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। উন্নত দেশসমূহের মানুষের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি বলে তাদের মাথাপিছু আয় অনেক বেশি (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩৭,৫০০ মার্কিন ডলার এবং জাপান ৩৫,২০০ মার্কিন ডলার। ফলে তারা উন্নত খাবার গ্রহণ, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, উন্নত নাগরিক সুবিধা লাভ করে। শ্রমিকদের কর্মক্ষমতাও বাড়ে।

৯। যখন সরকার অতি মাত্রায় মুদ্রা ছাপায় তখন দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায় (Prices Rise When the Government Prints Too Much Money)

মুদ্রা ছাপানোর ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি অধিক মাত্রায় মুদ্রা ছাপায় তাহলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে অর্থাৎ দ্রব্যের মূল্যস্তর বাড়ে। মুদ্রাস্ফীতি ঘটলে অর্থের মান বা মূল্য কমে যায়। ধরো, তুমি ৫০০/- টাকা খরচ করলে লেখাপড়ার প্রয়োজনীয় সামগ্রী পেয়ে যাও। কিন্তু টাকার মান কমে যাওয়ায় ঐ সামগ্রী পেতে তোমাকে ৬৫০/- টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। যা পূর্বের ৫০০/- টাকার চেয়ে (৬৫০/- – ৫০০/-) = ১৫০/- টাকা বেশি।

১০। সমাজ মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্বের মধ্যে স্বল্পকালীন দেওয়া-নেওয়ার মুখোমুখি হয় (Society Faces a Short Run Trade Off between Inflation and Unemployment)

দ্রব্য সামগ্রীর মূল্যস্তর বেড়ে যাওয়ার অবস্থাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে। আর কোনো শ্রমিক বাজার মজুরিতে কাজ করতে ইচ্ছুক কিন্তু কাজ পায় না – এরা হলো বেকার। মূল্যস্ফীতি কমলে বেকারত্ব বাড়ে। আবার বেকারত্ব কমলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে।