আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা কি?

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আওয়ামী লীগ নেতা ও পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। ১৯৬৮ সালের প্রথম ভাগে দায়ের করা এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল যে, শেখ মুজিব ও অন্যান্যরা ভারতের সাথে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল যে, শেখ মুজিব ও অন্যান্যরা ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানের পূর্ব অংশকে পৃথক করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করেছিল। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, তারা ভারতের সাথে একটি গোপন চুক্তি করেছিল এবং ভারতের সৈন্যবাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করার পরিকল্পনা করেছিল।

মামলার প্রধান আসামি ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। অন্যান্য আসামিদের মধ্যে ছিলেন:

  • আবদুল হামিদ খান ভাসানী
  • মওলানা আবদুল হামিদ
  • মাহবুবুল আলম চৌধুরী
  • এম আর আখতার
  • আব্দুল মালেক
  • সৈয়দ নজরুল ইসলাম
  • মাহমুদুল হক
  • জিয়াউর রহমান

মামলার শুনানি শুরু হয় ১৯ জুন ১৯৬৮ সালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। মামলার বিচারকার্য চলে প্রায় নয় মাস। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনাল শেখ মুজিবুর রহমানসহ ২৮ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি সাত জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়।

মামলার রায়ের পর পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণআন্দোলন শুরু হয়। গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান সরকার ২৫ মার্চ ১৯৬৯ সালে পদত্যাগ করে। ২৬ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া হয়।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই মামলাটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পথকে সুগম করে দিয়েছিল।

মামলার রায়ের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট মামলার রায় বাতিল করে দেয় এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল আসামিকে নির্দোষ ঘোষণা করে।