লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি আলোচনা কর

লাহোর প্রস্তাব ছিল ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ ভারতের লাহোর শহরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনে গৃহীত একটি প্রস্তাব। এই প্রস্তাব অনুসারে, ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলিকে একত্রিত করে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানানো হয়েছিল।

লাহোর প্রস্তাবের পটভূমি ছিল ব্রিটিশ ভারতে মুসলিমদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ। ব্রিটিশ শাসনকালে, মুসলমানরা ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। তবে, তারা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে এই আন্দোলনে তাদের স্বার্থ উপেক্ষিত বলে মনে করত।

১৯৩০ সালের গোলটেবিল সম্মেলনে, মুসলিম লীগ ভারতীয় মুসলমানদের জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দাবি জানায়। এই দাবির প্রতিক্রিয়ায়, কংগ্রেস ভারতীয় জাতির জন্য একটি একক, অখণ্ড রাষ্ট্রের দাবি জানায়।

১৯৩৭ সালের নির্বাচনে, কংগ্রেস ভারতের বেশিরভাগ প্রদেশে জয়ী হয়। মুসলিম লীগ মাত্র তিনটি প্রদেশে জয়ী হয়। কংগ্রেস সরকার গঠন করলে, তারা মুসলিমদের জন্য কোনো উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক অধিকার প্রদান করেনি।

এই পরিস্থিতিতে, মুসলিম লীগ একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে আরও বেশি জোরালো হয়ে ওঠে। ১৯৪০ সালের লাহোর অধিবেশনে, লীগের সভাপতি মওলানা আবুল কালাম আজাদ এই দাবির সমর্থনে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এবং লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত হয়।

লাহোর প্রস্তাব ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই প্রস্তাব মুসলিমদের মধ্যে একটি শক্তিশালী স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা করে। এটি ভারত বিভাগ এবং পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করে।

লাহোর প্রস্তাবের প্রধান দিকগুলি নিম্নরূপ:

  • ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলিকে একত্রিত করে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠন করা হবে।
  • এই রাষ্ট্রের নাম হবে পাকিস্তান।
  • পাকিস্তান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবে।
  • পাকিস্তানের সাথে ভারতের একটি শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে।

লাহোর প্রস্তাবের প্রভাব ছিল ব্যাপক। এই প্রস্তাব ভারতের মুসলিমদের মধ্যে একটি শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী চেতনার সৃষ্টি করে। এটি ভারত বিভাগের দিকে পরিচালিত করে এবং পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি প্রদান করে।