গ্রিন মার্কেটিং কাকে বলে? গ্রিন মার্কেটিং এর ধারণা | গ্রিন মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা

গ্রিন মার্কেটিং এর ধারণা

(Concept of Green Marketing)

গ্রিন মার্কেটিং এর ধারণাটি ১৯৮০ থেকে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। এই বিপণন ধারণাতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বিপণন কার্যক্রমের সাথে সাথে পরিবেশের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এখানে পরিবেশ বলতে প্রাকৃতিক পরিবেশ, যেমন নদ-নদী, জলবায়ু, বন, গাছ-পালা, জীবজন্তু ইত্যাদিকে বোঝানো হচ্ছে। একই সাথে মানুষসৃষ্ট সামাজিক পরিবেশ, যেমন রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সমষ্টিকে তুলে ধরা হয়েছে। গ্রিন মার্কেটিং-এ প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় ধরনের পরিবেশের প্রতি সচেতন থেকে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।যে বিপণন মতবাদে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেই বিপণনকে গ্রিন মার্কেটিং বলে।

গ্রিন মার্কেটিংএ বিপণনকারী বিপণন কার্যক্রমের সকল কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণ ও রক্ষার জন্য কাজ করে। যেমনপণ্য প্রস্তুত করার সময় পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার, পণ্য পরিবহন, মোড়কিকরণ, সংরক্ষণ এবং প্রচারণার সময় পরিবেশের যেন ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা হয়। বিপণন কার্যক্রমে পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে বিপণনকারীকে বিনিয়োগ বেশি করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে পণ্য বা সেবার মূল্যও সে কারণে বেড়ে যায়।

গ্রিন মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা 

(Importance of Green Marketing)

গ্রিন মার্কেটিং এমন একটি ধারণা বা মতবাদ যেখানে পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে পরিবেশের নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ভারসাম্যের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। নিম্নে গ্রিন মার্কেটিং-এর গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলোঃ 

১. বিপণন মতবাদের উন্নয়ন (Developing Marketing Concept): গ্রিন মাকেটিং হলো গতানুগতিক বিপণন মতবাদের আধুনিক সংস্করণ। এর মূল বক্তব্য হলো, বিপণন কার্যক্রমের দ্বারা কোন অবস্থাতেই পরিবেশের ক্ষতিসাধন করা যাবে না।

২. উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন (Changes in Production Process): গ্রিন বিপণনের দ্বারা পণ্য বা সেবা উৎপাদন প্রক্রিয়ার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। যেমন কারখানার বর্জ ব্যবস্থাপনা, কারখানার দূষিত পানি নদীনালা বা খাল-বিলে সরাসরি সরবরাহ না দেওয়া, কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মীদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করা ইত্যাদি ক্ষেত্রেগ্রিন বিপণনের অবদান কোন অংশে কম নয়।

৩. গুদামজাতকরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা (Importance in Warehousing System): গুদামজাতকরণ হলো বিপণন ব্যবস্থার একটি অন্যতম কাজ। অনেক পণ্য আছে যা সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন। এরূপ তাপমাত্রা রক্ষার জন্য সিএফসি গ্যাস নির্গত হয় যা পরিবেশের জন্য প্রচন্ড ক্ষতিকর। কিন্ত এ কাজটি যদি অপরিকল্পিত ও পরিবেশবান্ধব না হয়, তাহলে তা পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।

৪. পরিবহন ব্যবস্থার অগ্রগতি (Advancement inTransportation System): পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রিন মার্কেটিং-এর গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। বনাঞ্চল বা পাহাড় কেটে রাস্তা-ঘাট তৈরি করা আবার সমতল ভূমি কেটে নৌ-পথ নির্মাণ করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি অবশ্যই ভেবে দেখার বিষয়।

৫. বিজ্ঞাপন ব্যবস্থার উন্নয়ন (Development in Advertising System): গ্রিন মাকের্টিং-এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। বর্তমানেগ্রিন মাকের্টিং ধারণা উন্নয়নের ফলে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব ও প্রতিষ্ঠান কিভাবে পরিবেশ রক্ষা স্বার্থে কাজ করছে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হয়। পণ্যের প্রচার, প্রসার বা বিক্রয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও লক্ষ রাখা হয় যেন এমন কোন বিজ্ঞাপন দেওয়া না হয়, যা পরিবেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।

৬. পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা (Contribution in Preserving Environment): পরিবেশ সংরক্ষণ ও তা ভবিষ্যৎ বংশধরদের বাসযোগ্য করে তোলাই গ্রিন মাকের্টিং-এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এ লক্ষ্যে গ্রিন মাকের্টিং-এর মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন, বিজ্ঞাপনসহ সকল ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব বিপণন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। যেমন, পণ্য মোড়কে সিনথেটিক ও পলিথিন জাতীয় পদার্থের পরিবর্তে এখন প্রাকৃতিক পদার্থ যেমন পাট বা সূতা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি মোড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে।

৭. পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা তৈরি (Creating Awareness about Environment): গ্রিন মার্কেটিং এ পণ্য বিপণনকারীকে পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে উৎসাহ দেবার সাথে সাথে পণ্যের ক্রেতা বা সেবা গ্রাহককেও পরিবেশ বিষয়ক কার্যক্রমে সচেতন করে তোলা হয়। পরিবেশের উন্নয়ন ও তা সংরক্ষণে ভোক্তা তথা জনগণকে সচেতন করে তোলার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রমে তারা অংশ গ্রহণ করে। আবার সরাসরি পণ্যের মাধ্যমেও ক্রেতাদের পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করে তোলা হচ্ছে। যেমন: বিভিন্ন পণ্যের মোড়কে লেখা থাকেঃ “ব্যবহারের পর উচ্ছিষ্ট অংশ যেখানে সেখানে ফেলবেন না”, “বেশি বেশি গাছ লাগান”, “পরিবেশ বাঁচান” বা ”ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর” ইত্যাদি প্রচারণাগ্রিন মার্কেটিংয়েরই অবদান।