অনাবৃষ্টি কাকে বলে?
অনাবৃষ্টি হলো এমন একটি আবহাওয়া অবস্থা যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়। অনাবৃষ্টির ফলে খরা দেখা দেয়, যা পরিবেশ ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশে, বর্ষাকাল সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই সময়ের মধ্যে, বাংলাদেশে গড় বৃষ্টিপাত হয় ২,৫০০ মিলিমিটার। কিন্তু, যদি এই সময়ের মধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়, তাহলে সেই বছর বাংলাদেশে অনাবৃষ্টি দেখা দেয়।
অনাবৃষ্টির ফলে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়, ফলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, অনাবৃষ্টির ফলে ভূমিক্ষয়, জলসম্পদ সংকট, দাবানল ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অনাবৃষ্টির কারণ
অনাবৃষ্টির কারণগুলিকে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণের মধ্যে ভাগ করা যেতে পারে।
প্রাকৃতিক কারণ
- জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু, এই বাষ্প বেশিরভাগই মেঘে জমা হয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে।
- ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি: ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বায়ুমণ্ডলের উচ্চতায় জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এর ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
- বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তন: বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন ও পরিমাণে পরিবর্তন আসতে পারে।
মানুষ্যসৃষ্ট কারণ
- বন উজাড়: বন উজাড়ের ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কারণ, বন গাছপালা বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
- মাটি ক্ষয়: মাটি ক্ষয়ের ফলে বৃষ্টিপাতের জল মাটিতে শোষণ না হয়ে প্রবাহিত হয়ে যায়। এর ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
- কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার ব্যবহার: কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এর ফলে মাটিতে জলের আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
- শিল্পকারখানার দূষণ: শিল্পকারখানার দূষণের ফলে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এর ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
অনাবৃষ্টির প্রভাব
অনাবৃষ্টির প্রভাবগুলি হলো:
- কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতি: অনাবৃষ্টির ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
- জলসম্পদ সংকট: অনাবৃষ্টির ফলে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে যায়। ফলে জলসম্পদ সংকট দেখা দিতে পারে।
- দাবানল: অনাবৃষ্টির ফলে দাবানলের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- স্বাস্থ্য সমস্যা: অনাবৃষ্টির ফলে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
অনাবৃষ্টি প্রতিরোধে করণীয়
অনাবৃষ্টি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা পরিবেশ ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনাবৃষ্টি প্রতিরোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ
জলবায়ু পরিবর্তন অনাবৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে:
- গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস
- নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি
- বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ
বন সংরক্ষণ
বন বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। বন উজাড়ের ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়। তাই বন সংরক্ষণ অনাবৃষ্টি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাটি ক্ষয় রোধ
মাটি ক্ষয়ের ফলে বৃষ্টিপাতের জল মাটিতে শোষণ না হয়ে প্রবাহিত হয়ে যায়। এর ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়। তাই মাটি ক্ষয় রোধ অনাবৃষ্টি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাটি ক্ষয় রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে:
- ঝড়-বৃষ্টির সময় গাছপালা রোপণ
- কৃষি জমিতে আচ্ছাদন ফসল চাষ
- রাস্তার পাশে বাঁধ নির্মাণ
কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন
কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে অনাবৃষ্টির প্রভাব মোকাবেলা করা সম্ভব। এই প্রযুক্তিগুলির মধ্যে রয়েছে:
- পানি সাশ্রয়ী চাষ পদ্ধতি
- উন্নত বীজ ও সার ব্যবহার
- দ্রুত বর্ধনশীল ফসল চাষ
এছাড়াও, জনসাধারণকে অনাবৃষ্টি সম্পর্কে সচেতন করাও গুরুত্বপূর্ণ। জনসাধারণকে পানি সাশ্রয়ী জীবনযাপন ও বন সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে অনাবৃষ্টি প্রতিরোধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে:
- বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস প্রদান
- ভূমিক্ষয় রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ
- বনায়ন কর্মসূচি
- কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন
এই পদক্ষেপগুলির ফলে অনাবৃষ্টির প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।