সমযোজী যৌগ কাকে বলে? সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য | সমযোজী যৌগ চেনার উপায়

সমযোজী যৌগ কাকে বলে?

সমযোজী যৌগ হল এমন একটি যৌগ যেখানে পরমাণুসমূহ তাদের নিজেদের মধ্যে ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে। সমযোজী বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ পরমাণুসমূহের মধ্যে ইলেকট্রনগুলি সাধারণভাবে ভাগ করে নেওয়া হয়।

সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য

১) ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে পরমাণুসমূহ আবদ্ধ থাকে: সমযোজী যৌগের পরমাণুসমূহ তাদের নিজেদের মধ্যে ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে। ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে পরমাণুসমূহ একটি স্থিতিশীল ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করে।

২) এগুলি সাধারণত গ্যাস, তরল, বা কঠিন পদার্থ: সমযোজী যৌগের পদার্থের অবস্থা নির্ভর করে তাদের পরমাণুগুলির আকার এবং বন্ধনের প্রকৃতির উপর। ছোট পরমাণুগুলির মধ্যে গঠিত সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত গ্যাস বা তরল হয়। বড় পরমাণুগুলির মধ্যে গঠিত সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত কঠিন হয়।

৩) এগুলি সাধারণত তড়িৎ বিশ্লেষ্য নয়: সমযোজী যৌগের পরমাণুসমূহ ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে। তাই, এগুলিতে মুক্ত আয়ন থাকে না। ফলে, এগুলি তড়িৎ বিশ্লেষ্য নয়।

৪) এগুলি সাধারণত উচ্চ গলনাঙ্ক এবং ফুটনাঙ্কযুক্ত: সমযোজী যৌগের পরমাণুসমূহের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন থাকে। তাই, এগুলিকে গলানো বা ফুটানোর জন্য বেশি শক্তি প্রয়োজন হয়। ফলে, এগুলির গলনাঙ্ক এবং ফুটনাঙ্ক সাধারণত বেশি হয়।

৫) এগুলি সাধারণত ভঙ্গুর হয়: সমযোজী যৌগের পরমাণুসমূহের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন থাকে। কিন্তু, এই বন্ধনগুলি একই দিকে মুখ করে থাকে না। ফলে, যৌগটিকে একটি শক্তির প্রভাবে ভেঙ্গে ফেলা সহজ হয়। তাই, এগুলি সাধারণত ভঙ্গুর হয়।

৬) এগুলি সাধারণত অদ্রাব্য বা দুর্বলভাবে দ্রবণীয়: সমযোজী যৌগের পরমাণুসমূহের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন থাকে। তাই, দ্রাবক অণুগুলির সাথে এগুলির বন্ধন ভেঙে যাওয়া কঠিন হয়। ফলে, এগুলি সাধারণত অদ্রাব্য বা দুর্বলভাবে দ্রবণীয় হয়।

৭) এগুলি সাধারণত সমানুতা দেখায়: সমযোজী যৌগের পরমাণুসমূহের মধ্যে গঠিত বন্ধনগুলির সংখ্যা এবং প্রকৃতি একই হলে, যৌগটি সমানুতা দেখায়। যেমন, জল (H2O) এবং কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) উভয়ই সমযোজী যৌগ। কিন্তু, জলে প্রতিটি অণুতে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু থাকে। অন্যদিকে, কার্বন ডাই অক্সাইডে প্রতিটি অণুতে একটি কার্বন পরমাণু এবং দুটি অক্সিজেন পরমাণু থাকে। তাই, জল এবং কার্বন ডাই অক্সাইড উভয়ই সমানুতা দেখায়।

সমযোজী যৌগ চেনার উপায়

সমযোজী যৌগ চেনার জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলি ব্যবহার করা যেতে পারে:

  • রাসায়নিক সংকেত: সমযোজী যৌগের রাসায়নিক সংকেতে সাধারণত দুটি বা ততোধিক ভিন্ন মৌলের চিহ্ন থাকে। উদাহরণস্বরূপ, H2O, CO2, CH4, SiO2, ইত্যাদি সমযোজী যৌগের রাসায়নিক সংকেত।
  • ইলেকট্রন বিন্যাস: সমযোজী যৌগের গঠনকারী পরমাণুগুলির ইলেকট্রন বিন্যাস বিবেচনা করেও সমযোজী যৌগ চেনা যেতে পারে। সমযোজী যৌগ গঠনের জন্য অংশগ্রহণকারী পরমাণুগুলির ইলেকট্রন বিন্যাস এমন হওয়া উচিত যাতে তারা স্থিতিশীল ইলেকট্রন কনফিগারেশন অর্জন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোজেন পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস 1s1। এটিতে একটিমাত্র ইলেকট্রন রয়েছে এবং এটি একটি স্থিতিশীল ইলেকট্রন কনফিগারেশন অর্জনের জন্য আরেকটি ইলেকট্রন অর্জন করতে চায়। অক্সিজেন পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস 1s2 2s2 2p4। এটিতে ছয়টি ইলেকট্রন রয়েছে এবং এটি একটি স্থিতিশীল ইলেকট্রন কনফিগারেশন অর্জনের জন্য আরও দুটি ইলেকট্রন হারাতে চায়। এই দুইটি পরমাণু সমযোজী বন্ধন গঠন করে H2O যৌগ গঠন করে।
  • গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাংক: সমযোজী যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাংক সাধারণত কম হয়। কারণ, সমযোজী যৌগের অণুগুলি পরস্পরের মধ্যে দুর্বল আকর্ষণ বল দ্বারা আবদ্ধ থাকে।
  • বিদ্যুৎ পরিবাহিতা: সমযোজী যৌগ সাধারণত তড়িৎ পরিবাহী হয় না। কারণ, সমযোজী যৌগের অণুগুলিতে মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না।
  • রাসায়নিক ধর্ম: সমযোজী যৌগ সাধারণত রাসায়নিকভাবে কম সক্রিয় হয়। কারণ, সমযোজী যৌগের অণুগুলি পরস্পরের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ থাকে।