শস্যাবর্তন কাকে বলে? শস্যাবর্তনের পদ্ধতি, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

শর্স্যাবর্তন কাকে বলে?

শস্যাবর্তন হল একই জমিতে একই ফসল বছরের পর বছর ধরে চাষ না করে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা। এটি একটি কৃষি পদ্ধতি যা জমির উর্বরতা ধরে রাখা, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জমির ক্ষয়রোধে সহায়তা করে।

শস্যাবর্তনের মূল উদ্দেশ্য হল জমির উর্বরতা ধরে রাখা। একই ফসল বছরের পর বছর ধরে চাষ করলে জমির মাটিতে সেই ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলির পরিমাণ কমে যায়। ফলে ফসলের ফলন হ্রাস পায়। শস্যাবর্তন করলে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষের ফলে মাটিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান ফিরে আসে। এতে জমির উর্বরতা ধরে রাখা সম্ভব হয়।

শস্যাবর্তন ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে। একই ফসল বছরের পর বছর ধরে চাষ করলে ফসলের রোগবালাই এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। ফলে ফসলের ফলন হ্রাস পায়। শস্যাবর্তন করলে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষের ফলে ফসলের রোগবালাই এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণ কমে যায়। এতে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

শস্যাবর্তন জমির ক্ষয়রোধেও সহায়তা করে। একই ফসল বছরের পর বছর ধরে চাষ করলে জমির মাটিতে পানি জমে থাকে। এতে মাটির ক্ষয়রোধ ক্ষমতা কমে যায়। শস্যাবর্তন করলে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষের ফলে জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি হয়। এতে মাটির ক্ষয়রোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

শস্যাবর্তনের পদ্ধতি

শস্যাবর্তনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ পদ্ধতি হল:

  • তিন ফসলের পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ফসল একই জমিতে পর্যায়ক্রমে চাষ করা হয়। যেমন, প্রথম বছর ধান, দ্বিতীয় বছর গম এবং তৃতীয় বছর ডাল।
  • চার ফসলের পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে চারটি ভিন্ন ভিন্ন ফসল একই জমিতে পর্যায়ক্রমে চাষ করা হয়। যেমন, প্রথম বছর ধান, দ্বিতীয় বছর গম, তৃতীয় বছর ডাল এবং চতুর্থ বছর ভুট্টা।
  • পাঁচ ফসলের পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ফসল একই জমিতে পর্যায়ক্রমে চাষ করা হয়। যেমন, প্রথম বছর ধান, দ্বিতীয় বছর গম, তৃতীয় বছর ডাল, চতুর্থ বছর ভুট্টা এবং পঞ্চম বছর তিল।

বাংলাদেশে শস্যাবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পদ্ধতি। এটি জমির উর্বরতা ধরে রাখা, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জমির ক্ষয়রোধে সহায়তা করে।

শস্যাবর্তন এর বৈশিষ্ট্য

শস্যাবর্তনের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ:

  • জমির উর্বরতা ধরে রাখা: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে জমিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান ফিরে আসে। এতে জমির উর্বরতা ধরে রাখা সম্ভব হয়।
  • ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে ফসলের রোগবালাই এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণ কমে যায়। এতে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
  • জমির ক্ষয়রোধ: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি হয়। এতে মাটির ক্ষয়রোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • পশুখাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে ডাল, তৈলবীজ ইত্যাদি পশুখাদ্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
  • খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এতে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়।
  • কৃষি জমির ব্যবহার বৃদ্ধি: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে ফসল পর্যায়ক্রমে চাষ করা হয়। এতে কৃষি জমির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।
  • কৃষি ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে কৃষি ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আসে।

এছাড়াও, শস্যাবর্তনের মাধ্যমে জমির আর্দ্রতা ধরে রাখা, মাটির রসায়নিক গঠন উন্নত করা, মাটির গঠন শক্তিশালী করা এবং জমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।

শস্যাবর্তন এর সুবিধা ও অসুবিধা

শস্যাবর্তনের সুবিধা

  • জমির উর্বরতা ধরে রাখা: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে জমিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান ফিরে আসে। এতে জমির উর্বরতা ধরে রাখা সম্ভব হয়।
  • ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে ফসলের রোগবালাই এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণ কমে যায়। এতে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
  • জমির ক্ষয়রোধ: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি হয়। এতে মাটির ক্ষয়রোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • পশুখাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে ডাল, তৈলবীজ ইত্যাদি পশুখাদ্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
  • খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এতে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়। 
  • কৃষি জমির ব্যবহার বৃদ্ধি: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে ফসল পর্যায়ক্রমে চাষ করা হয়। এতে কৃষি জমির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। 
  • কৃষি ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা: শস্যাবর্তনের মাধ্যমে কৃষি ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আসে।

শস্যাবর্তনের অসুবিধা

  • শস্যাবর্তন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন ও পরিচালনায় জটিলতা রয়েছে।
  • শস্যাবর্তন ব্যবস্থায় কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।
  • শস্যাবর্তন ব্যবস্থায় কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, শস্যাবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পদ্ধতি। এর মাধ্যমে জমির উর্বরতা ধরে রাখা, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জমির ক্ষয়রোধে সহায়তা করা সম্ভব হয়।

শস্যাবর্তন সম্পর্কে FAQ’s

১. শস্যাবর্তন কাকে বলে?

শস্যাবর্তন হল একই জমিতে একই ফসল বছরের পর বছর ধরে চাষ না করে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা। এটি একটি কৃষি পদ্ধতি যা জমির উর্বরতা ধরে রাখা, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জমির ক্ষয়রোধে সহায়তা করে।

২. শস্যাবর্তনের উদ্দেশ্য কী?

শস্যাবর্তনের উদ্দেশ্য হল জমির উর্বরতা ধরে রাখা, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জমির ক্ষয়রোধ করা।

৩. শস্যাবর্তনের সুবিধা কী কী?

  • শস্যাবর্তনের সুবিধাগুলি হল:
  • জমির উর্বরতা ধরে রাখা
  • ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি
  • জমির ক্ষয়রোধ
  • পশুখাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি
  • খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি
  • কৃষি জমির ব্যবহার বৃদ্ধি
  • কৃষি ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা

৪. শস্যাবর্তনের অসুবিধা কী কী?

শস্যাবর্তনের অসুবিধাগুলি হল:

  • শস্যাবর্তন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন ও পরিচালনায় জটিলতা রয়েছে।
  • শস্যাবর্তন ব্যবস্থায় কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।
  • শস্যাবর্তন ব্যবস্থায় কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।

৫. শস্যাবর্তনের জন্য কোন কোন ফসল নির্বাচন করা উচিত?

শস্যাবর্তনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফসল নির্বাচন করা উচিত। যেমন, ধান, গম, ভুট্টা, ডাল, তৈলবীজ, মসলা, শাকসবজি ইত্যাদি।

৬. শস্যাবর্তনের জন্য কোন কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়?

শস্যাবর্তনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন,

  • তিন ফসলের পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি
  • চার ফসলের পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি
  • পাঁচ ফসলের পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি
  • সার্বজনীন শস্যাবর্তন পদ্ধতি
  • বিকল্প শস্যাবর্তন পদ্ধতি
  • অন্তর্বর্তী শস্যাবর্তন পদ্ধতি

৭. শস্যাবর্তনের জন্য কোন কোন বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিত?

শস্যাবর্তনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিত:

  • জমির মাটির ধরন
  • জলবায়ু
  • ফসলের চাহিদা
  • কৃষি শ্রমিকের প্রাপ্যতা
  • কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ

৮. শস্যাবর্তন কীভাবে জমির উর্বরতা ধরে রাখতে সাহায্য করে?

শস্যাবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ফসল বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে। ফলে জমিতে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান ফিরে আসে। এতে জমির উর্বরতা ধরে রাখা সম্ভব হয়।

৯. শস্যাবর্তন কীভাবে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে?

শস্যাবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ফসল বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই এবং কীটপতঙ্গের প্রতি সহনশীল হয়। ফলে একই ফসল বছরের পর বছর ধরে চাষ করলে যেমন রোগবালাই এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়, তেমনি শস্যাবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করলে রোগবালাই এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণ কমে যায়। এতে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

১০. শস্যাবর্তন কীভাবে জমির ক্ষয়রোধে সাহায্য করে?

শস্যাবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ফসল বিভিন্ন ধরনের শিকড় ব্যবস্থা গঠন করে। ফলে জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি হয়। এতে মাটির ক্ষয়রোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।