ডিজিটাল মার্কেটিং কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? প্রয়োজনীয়তা

ডিজিটাল মার্কেটিং কাকে বলে?

ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে ইন্টারনেট এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে পণ্য বা পরিষেবার প্রচারণা ও বিক্রয়কে বোঝায়। এটি ঐতিহ্যবাহী মার্কেটিং পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কিছু উদাহরণ:

  • সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO): ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্টে (SERPs) উচ্চতর র‌্যাঙ্ক করতে SEO ব্যবহার করা হয়।
  • পে-পার-ক্লিক (PPC) বিজ্ঞাপন: PPC বিজ্ঞাপনদাতারা প্রতিটি ক্লিকের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং: সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে পণ্য বা পরিষেবার প্রচার করা।
  • ইমেইল মার্কেটিং: ইমেলের মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো।
  • কন্টেন্ট মার্কেটিং: ব্লগ পোস্ট, ইনফোগ্রাফিক এবং ভিডিওর মতো মূল্যবান কন্টেন্ট তৈরি করে গ্রাহকদের আকর্ষণ করা।
ডিজিটাল মার্কেটিং কাকে বলে

ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার ও কি কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং বিভিন্ন উপায়ে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। যেমন-

চ্যানেল অনুসারে:

  • সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM): এতে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO) এবং পে-পার-ক্লিক (PPC) বিজ্ঞাপন অন্তর্ভুক্ত।
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM): এতে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এবং লিঙ্কডইনের মতো প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন এবং প্রচারণা অন্তর্ভুক্ত।
  • কন্টেন্ট মার্কেটিং: এতে ব্লগ পোস্ট, ইনফোগ্রাফিক, ভিডিও এবং ই-বুক তৈরি করা অন্তর্ভুক্ত।
  • ইমেইল মার্কেটিং: এতে ইমেলের মাধ্যমে সম্ভাব্য এবং বিদ্যমান গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করা অন্তর্ভুক্ত।
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: এতে অন্যদের পণ্য বা পরিষেবা প্রচার করে কমিশন অর্জন করা অন্তর্ভুক্ত।

উদ্দেশ্য অনুসারে:

  • ব্র্যান্ডিং: ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি করতে এবং ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তি তৈরি করতে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করা।
  • লিড জেনারেশন: সম্ভাব্য গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করতে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করা।
  • ডিমান্ড জেনারেশন: পণ্য বা পরিষেবার জন্য আগ্রহ তৈরি করতে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করা।
  • সেলস: সরাসরি অনলাইনে পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করতে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করা।
  • কাস্টমার রিটেনশন: বিদ্যমান গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করা।

জনপ্রিয় ডিজিটাল মার্কেটিং পদ্ধতি:

  • সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO): ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্টে (SERPs) উচ্চতর র‌্যাঙ্ক করতে SEO ব্যবহার করা হয়।
  • পে-পার-ক্লিক (PPC) বিজ্ঞাপন: PPC বিজ্ঞাপনদাতারা প্রতিটি ক্লিকের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং: সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম যেমন ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে পণ্য বা পরিষেবার প্রচার করা।
  • ইমেইল মার্কেটিং: ইমেলের মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো।
  • কন্টেন্ট মার্কেটিং: ব্লগ পোস্ট, ইনফোগ্রাফিক এবং ভিডিওর মতো মূল্যবান কন্টেন্ট তৈরি করে গ্রাহকদের আকর্ষণ করা।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা/

ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করবো?

ডিজিটাল মার্কেটিং আজকের বাজারে ব্যবসা করার জন্য একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করে আপনি আপনার ব্যবসার বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি করতে পারেন। ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা নিম্নরূপ-

১. বিশ্বব্যাপী বাজারে পৌঁছানো: ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে অবস্থিত সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

২. খরচ কমানো: ঐতিহ্যবাহী মার্কেটিংয়ের তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক কম খরচে করা যায়।

৩. টার্গেটেড মার্কেটিং: ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে আপনার পণ্য বা পরিষেবায় আগ্রহী এমন লোকেদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

৪. রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (ROI) পরিমাপ করা: ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ROI পরিমাপ করা খুব সহজ, যা আপনাকে আপনার মার্কেটিং প্রচারণার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে।

৫. দ্রুত ফলাফল: ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।

৬. গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি: ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে আপনার গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৭. ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি: ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

৮. প্রতিযোগিতার সাথে তাল মিলিয়ে চলা: বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যবসাই প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার করছে। আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবহার না করেন, তাহলে আপনার প্রতিযোগীদের তুলনায় আপনি পিছিয়ে পড়বেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে করতে হয়?

ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার জন্য, আপনাকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে:

১. আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: আপনি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কী অর্জন করতে চান তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করুন। আপনার লক্ষ্য হতে পারে ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করা, লিড জেনারেট করা, বা বিক্রয় বৃদ্ধি করা।

২. আপনার টার্গেট অডিয়েন্স চিহ্নিত করুন: আপনার পণ্য বা পরিষেবার প্রতি কারা আগ্রহী হবে তা বের করুন। তাদের বয়স, লিঙ্গ, আগ্রহ, এবং অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নিন।

৩. আপনার বাজেট নির্ধারণ করুন: ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য আপনি কত খরচ করতে ইচ্ছুক তা নির্ধারণ করুন।

৪. আপনার মার্কেটিং চ্যানেল নির্বাচন করুন: আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কোন চ্যানেল ব্যবহার করে তা বের করুন এবং সেই অনুযায়ী আপনার মার্কেটিং চ্যানেল নির্বাচন করুন। যেমন: ওয়েবসাইট, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO), পে-পার-ক্লিক (PPC) বিজ্ঞাপন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, কন্টেন্ট মার্কেটিং ইত্যাদি।

৫. আপনার মার্কেটিং প্রচারণা তৈরি করুন: আপনার লক্ষ্য, টার্গেট অডিয়েন্স এবং বাজেট অনুযায়ী একটি মার্কেটিং প্রচারণা তৈরি করুন।

৬. আপনার প্রচারণার ফলাফল ট্র্যাক করুন: আপনার প্রচারণার কার্যকারিতা ট্র্যাক করতে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে ডেটা ব্যবহার করুন।

ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার জন্য অনেক রিসোর্স অনলাইনে এবং অফলাইনে পাওয়া যায়। আপনি অনলাইন কোর্স করতে পারেন, বই পড়তে পারেন, বা ব্লগ এবং ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

কিছু জনপ্রিয় ডিজিটাল মার্কেটিং রিসোর্স:

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ গুলো কি কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ গুলো বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, কারণ এটি বিভিন্ন মাধ্যম এবং কৌশল ব্যবহার করে করা হয়।ডিজিটাল মার্কেটিং এর কিছু সাধারণ কাজ গুলো হল:

১. কৌশল তৈরি:

আপনার ব্যবসার লক্ষ্য, টার্গেট অডিয়েন্স এবং বাজেট অনুযায়ী একটি ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল তৈরি করা।

২. ওয়েবসাইট তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ:

  • আপনার ব্যবসার জন্য একটি আকর্ষণীয় এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব ওয়েবসাইট তৈরি করা।
  • ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট নিয়মিত আপডেট করা।
  • ওয়েবসাইটের SEO (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন) করার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্টে (SERPs) এর র‌্যাঙ্কিং উন্নত করা।

৩. সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট:

  • বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে (যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম) আপনার ব্যবসার অ্যাকাউন্ট তৈরি এবং পরিচালনা করা।
  • নিয়মিতভাবে আকর্ষণীয় এবং মূল্যবান কন্টেন্ট পোস্ট করা।
  • গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।

৪. কন্টেন্ট মার্কেটিং:

  • ব্লগ পোস্ট, ইনফোগ্রাফিক, ভিডিও, ই-বুক ইত্যাদির মতো মূল্যবান কন্টেন্ট তৈরি করা।
  • কন্টেন্ট SEO (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন) করার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্টে (SERPs) এর র‌্যাঙ্কিং উন্নত করা।
  • সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কন্টেন্ট প্রচার করা।

৫. সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM):

  • SEO (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন) ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্টে (SERPs) এর র‌্যাঙ্কিং উন্নত করা।
  • PPC (পে-পার-ক্লিক) বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্টে (SERPs) এর শীর্ষে আপনার ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দেখানো।

৬. ইমেইল মার্কেটিং:

  • ইমেইলের মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো।
  • বিশেষ অফার এবং প্রোমোশন সম্পর্কে গ্রাহকদের জানানো।
  • গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া।

৭. বিশ্লেষণ ও রিপোর্টিং:

  • আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং প্রচারণার ফলাফল ট্র্যাক করার জন্য ডেটা ব্যবহার করা।
  • প্রয়োজনে আপনার কৌশল এবং প্রচারণা পরিবর্তন করার জন্য রিপোর্ট ব্যবহার করা।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ বলে মনে করা হয়। কারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং মানুষ ক্রমশ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বেশি সময় ব্যয় করছে। এর ফলে, ব্যবসায়ীদের কাছে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হয়ে উঠছে।

কিছু কারণ যা ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করে তোলে:

  • ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি: বর্তমানে, বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
  • মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বৃদ্ধি: মানুষ ক্রমশ ডেস্কটপের পরিবর্তে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করছে। এর ফলে, মোবাইল ডিভাইসের জন্য উপযোগী ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বৃদ্ধি: মানুষ ক্রমশ সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় ব্যয় করছে। এর ফলে, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ব্যবসায়ীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
  • ডেটা বিশ্লেষণের ব্যবহার বৃদ্ধি: ব্যবসায়ীরা ডেটা বিশ্লেষণ ব্যবহার করে তাদের গ্রাহকদের সম্পর্কে আরও ভালভাবে বুঝতে পারছে। এর ফলে, তারা তাদের মার্কেটিং কৌশলগুলিকে আরও কার্যকর করতে পারছে।

Leave a Comment