সংকর জাতি বলতে কি বোঝায়?
সংকর জাতি হল দুটি ভিন্ন জাত, প্রজাতি, গণ, বা এমনকি ভিন্ন পরিবারের জীবের প্রজননের ফলে উদ্ভূত জীব।
জীববিজ্ঞানের ভাষায়, দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আন্তঃপ্রজননের ফলে উদ্ভূত নতুন প্রজন্মকে ওই দুই প্রজাতির সংকর (হাইব্রিড বা ক্রসব্রিড) বলে।
সংকর করার প্রক্রিয়াটিকে সংকরায়ন বলে। সংকর জীব তাদের নিজস্ব গুণাবলির অধিকারী হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সংকরটি তার পিতামাতা থেকে ভিন্ন এবং উন্নত বৈশিষ্ট্যও দেখাতে পারে।
উদ্ভিদের ক্ষেত্রে:
- দুটি ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের পরাগরেণু সংযোগের ফলে উদ্ভূত বীজ থেকে যে জীব জন্মে, তাকে সংকর জাত বলা হয়।
- উদ্ভিদের সংকর জাত তৈরি করা হয় কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য।
- সংকর জাত উদ্ভিদে পিতামাতার উভয় জাতের বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে।
প্রাণীর ক্ষেত্রে:
- দুটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর মিলনের ফলে জন্মগ্রহণকারী জীবকে সংকর জাত বলা হয়।
- প্রাণীর সংকর জাত তৈরি করা হয় বিরল প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণের জন্য, অথবা পোষা প্রাণীর নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য।
- প্রাণীর সংকর জাত সবসময় সন্তানোৎপাদনক্ষম হয় না।
কিছু উদাহরণ:
উদ্ভিদ:
- গম ও রাই এর সংকর জাত – ট্রাইটিকেল
- লেবু ও কমলালেবুর সংকর জাত – লেবু
প্রাণী:
- ঘোড়া ও গাধার সংকর জাত – খচ্চর
- সিংহ ও বাঘিনীর সংকর জাত – লাইগার
সংকর জাতের সুবিধা
- উন্নত বৈশিষ্ট্য: সংকর জাত তৈরি করা হয় পিতামাতার জাতের উন্নত বৈশিষ্ট্য একত্রিত করার জন্য।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: সংকর জাত প্রায়শই পিতামাতার জাতের তুলনায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ধারণ করে।
- উচ্চ ফলনশীলতা: সংকর জাত প্রায়শই পিতামাতার জাতের তুলনায় বেশি ফলনশীল হয়।
- উন্নত মানের উৎপাদন: সংকর জাত উন্নত মানের ফসল, ফল, মাংস, দুধ ইত্যাদি উৎপাদন করতে পারে।
- পরিবেশগত প্রতিকূলতার সাথে খাপ খাওয়ানো: সংকর জাত প্রায়শই পরিবেশগত প্রতিকূলতার সাথে পিতামাতার জাতের তুলনায় ভালোভাবে খাপ খাওয়াতে পারে।
- দ্রুত বৃদ্ধি: সংকর জাত প্রায়শই পিতামাতার জাতের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- নতুন জাত উদ্ভাবন: সংকর জাত তৈরির মাধ্যমে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব।
- জীবাণুবৈচিত্র্য বৃদ্ধি: সংকর জাত তৈরির মাধ্যমে জীবাণুবৈচিত্র্য বৃদ্ধি করা সম্ভব।
সংকর জাতের অসুবিধা
- সন্তানোৎপাদনক্ষমতা না থাকা: সব সংকর জাত সন্তানোৎপাদনক্ষম হয় না।
- জীবাণুবৈচিত্র্য হ্রাস: সংকর জাত তৈরির ফলে জীবাণুবৈচিত্র্য হ্রাস পেতে পারে।
- জিনগত দূষণ: সংকর জাত তৈরির ফলে জিনগত দূষণের ঝুঁকি থাকে।
- নির্ভরতা: সংকর জাতের বীজ, চারা, বা প্রাণী কৃষকদের বীজ কোম্পানি বা প্রাণী প্রজননকারীদের উপর নির্ভরশীল করে তোলে।
- উচ্চ খরচ: সংকর জাতের বীজ, চারা, বা প্রাণী পিতামাতার জাতের তুলনায় বেশি খরচের হতে পারে।
- স্থানীয় জাতের বিলুপ্তি: সংকর জাতের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে স্থানীয় জাতের বিলুপ্তির ঝুঁকি থাকে।