খারিফ শস্য কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য, উদাহরণ ও গুরুত্ব

খারিফ শস্য কাকে বলে?

বর্ষাকালে যেসব ফসল বপন করা হয় এবং সেই মৌসুমেই কাটা হয় তাদেরকে খরিফ শস্য বলে।

খারিফ শস্য হলো সেই সব শস্য যা বর্ষাকালে, অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বপন করা হয় এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে কাটা হয়। এই শস্যগুলো বৃষ্টির জলের উপর নির্ভরশীল এবং বর্ষার অতিরিক্ত জল সহ্য করতে পারে।

খারিফ শস্যের বৈশিষ্ট্য

১) খারিফ শস্য বর্ষাকালে (জুন-সেপ্টেম্বর) বপন করা হয় এবং শীতকালে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) কাটা হয়।

২) বৃষ্টির পানি এই ফসলের জন্ম ও বৃদ্ধির জন্য প্রধান জলের উৎস।

৩) খরিফ শস্য দ্রুত জন্মে এবং বর্ষাকালের মধ্যেই পরিপক্ক হয়।

৪) বেশিরভাগ খরিফ শস্য ৩ – ৪ মাসের মধ্যে পরিপক্কতা লাভ করে।

৫) খরিফ শস্য বর্ষার অতিরিক্ত পানিতে টিকে থাকতে পারে।

৬) এই শস্যের বীজ ও চারা পানিতে ভেসে যায় না।

খারিপ শস্যের উদাহরণ

  • ধান: বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য।
  • ভুট্টা: একটি জনপ্রিয় খাদ্য এবং পশুখাদ্য।
  • জোয়ার: ভুট্টার মতো, এটিও একটি খাদ্য এবং পশুখাদ্য।
  • বাজরা: একটি খাদ্যশস্য, বিশেষ করে শুষ্ক অঞ্চলে।
  • মুগ: একটি ডাল।
  • তুলা: একটি অর্থনৈতিক ফসল, যা থেকে তৈলাক্ত বীজ এবং তন্তু উৎপাদন করা হয়।
  • পাট: একটি অর্থনৈতিক ফসল, যা থেকে তন্তু উৎপাদন করা হয়।
  • চীনাবাদাম: একটি তৈলাক্ত বীজ।
  • সয়াবিন: একটি তৈলাক্ত বীজ এবং উচ্চ-প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য।

খারিফ শস্যের গুরুত্ব

১. খারিফ শস্য, বিশেষ করে ধান, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান খাদ্য হলো ধান।

২. খারিফ শস্য উৎপাদন বাংলাদেশের বৃহৎ সংখ্যক মানুষের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। কৃষক, কৃষি শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য অনেক মানুষ এই শস্যের উপর নির্ভরশীল।

৩. খারিফ শস্য বাংলাদেশের জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ধান, পাট, ও তুলো রপ্তানি করে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।

৪. খারিফ শস্য বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের উৎস। ধান, ভুট্টা, ও ডাল শরীরে প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ও ভিটামিন সরবরাহ করে।

৫. খারিফ শস্যের চাষ ও উৎপাদনের সাথে জড়িত বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে বৃহৎ সংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়।

৬. খারিফ শস্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। ধানের চাষ জমির ক্ষয় রোধ করে এবং বন্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৭. খারিফ শস্য গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ড। এই শস্যের উৎপাদন গ্রামের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস।

৮. খারিফ শস্য কৃষি গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। নতুন নতুন উন্নত জাত ও চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

উল্লেখ্য যে, খরিফ শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনা, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার, ও কৃষকদের প্রশিক্ষণের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।