বার্ষিক গতি কাকে বলে? বার্ষিক গতির কারণ ও ফলাফল

বার্ষিক গতি কাকে বলে?

সূর্যের মহাকর্ষ বলের আকর্ষণে পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর অবিরাম ঘুরছে।পৃথিবীর এই গতিকে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলা হয়।

পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ক্রমাগত পাক খেতে খেতে তার কক্ষপথ ধরে সূর্যের চারিদিকে আবর্তন করছে। এইভাবে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করতে পৃথিবীর সময় লাগে 365 দিন 6 ঘণ্টা 56 মিনিট 54 সেকেন্ড। এইরূপ গতিকে বলা হয় পৃথিবীর বার্ষিক গতি।

একবার সূর্যকে পরিক্রমণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। একে সৌরবছরবলে।

৪ বছরে একবার ফেব্রুয়ারি মাসকে একদিন বাড়িয়ে ২৯ দিন করা হয় এবং ঐ বছরটিকে ৩৬৬ ধরা হয়। সেই বছরকে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ বলে।

আর্যভট্ট আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি প্রথম আবিষ্কার করেন।পৃথিবী নিজ অক্ষের চারদিকে ঘুরছে এবং একই সঙ্গে উপবৃত্তাকার পথে একবার সূর্যের চারদিকে ঘুরে আসে। আপন কক্ষপথে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে পৃথিবীর এই পরিক্রমণকে বার্ষিক গতি বলে। পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে ঋতু পরিবর্তন ঘটে এবং দিন-রাত্রি ছোট-বড় হয়। পৃথিবী সবসময়ই সূর্য থেকে আলো ও তাপ পেয়ে থাকে। তবে পৃথিবীর সব স্থান বছরের সব সময় সমান আলো ও তাপ পায় না। এর কারণ পৃথিবী হেলানো অবস্থায় সূর্যের চারদিকে ঘোরে। হেলানো অবস্থায় সূর্যের চারদিকে ঘোরে বলে কখনো উত্তর মেরু সূর্যের কাছাকাছি আসে এবং দক্ষিণ মেরু দূরে সরে যায়। আবার এক সময় এর ঠিক উল্টোটাও ঘটে। আবার কখনো উত্তর মেরু সমান দূরত্বে থাকে। যখন পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের কাছাকাছি থাকে তখন সে অংশ তাপ ও আলো বেশিক্ষণ ধরে পায়। ফলে পৃথিবীর সে অংশে দিন বড় ও রাত ছোট হয়। আর তাপ বেশি পায় বলে সে সময়টা হয় সে স্থানের জন্য গ্রীষ্মকাল। এর বিপরীত অংশে তখন তাপ কম পায় বলে শীতকাল হয় এবং আলো কম পায় বলে রাত বড় হয়। বার্ষিক গতির কারণে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে ২১ জুন দিন সবচেয়ে বড় ও রাত সবচেয়ে ছোট হয়। ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে বলে ওইদিন দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় এবং রাত সবচেয়ে ছোট হয়।

তথ্য কণিকা

  • ২১ শে জুনঃ এইদিনে উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন এবং সবচেয়ে ছোট রাত হয়। দক্ষিন গোলার্ধে বিপরীত অবস্থা বিরাজ করে। ২১ জুন সূর্য উত্তরায়নের শেষ সীমায় পৌঁছায় একে কর্কটক্রান্তি রেখা বলে।
  • ২৩ শে সেপ্টেম্বরঃ এইদিনে দিবারাত্রি সমান হয়।
  • ২২ শে ডিসেম্বরঃ উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে ছোট দিন ও সবচেয়ে বড় রাত হয়। দক্ষিন গোলার্ধে বিপরীত অবস্থা থাকে।
  • ২১ শে মার্চঃ ২৩ সেপ্টেম্বরের মত এই দিনেও দিবারাত্রি সমান হয়।
  • উত্তর গোলার্ধে যখন গ্রীষ্মকাল দক্ষিন গোলার্ধে তখন শীতকাল।
  • উত্তর গোলার্ধে যখন শরৎকাল দক্ষিন গোলার্ধে তখন শরৎকাল।
  • উত্তর গোলার্ধে যখন শরৎকাল দক্ষিন গোলার্ধে তখন বসন্তকাল।
  • বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত।

বার্ষিক গতির কারণ

পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণগুলি নিম্নরূপ:

  • পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট গতিশক্তি রয়েছে। এই গতিশক্তি পৃথিবীকে সূর্যের কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যেতে বাধা দেয়।
  • পৃথিবীর কেন্দ্রে একটি মহাকর্ষীয় শক্তি রয়েছে যা পৃথিবীকে সূর্যের দিকে আকর্ষণ করে। এই মহাকর্ষীয় শক্তি পৃথিবীকে সূর্যের দিকে টেনে ধরে।
  • পৃথিবীর অক্ষের হেলে থাকা। পৃথিবীর অক্ষটি সূর্যের চারদিকে ঘোরে যখন এটি একটি নির্দিষ্ট কোণে হেলে থাকে। এই হেলে থাকা অবস্থাটি পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সূর্য থেকে বিভিন্ন পরিমাণে সৌর বিকিরণের সংস্পর্শে আসতে দেয়।
  • পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ। পৃথিবীর কক্ষপথ সূর্যকে কেন্দ্র করে একটি উপবৃত্তাকার আকৃতির। এই উপবৃত্তাকার আকৃতির কারণে পৃথিবীর সূর্যের কাছাকাছি এবং দূরে যাওয়ার সময় পরিবর্তিত হয়।
  • সূর্যের আকর্ষণীয় শক্তির পরিবর্তন। সূর্যের ভর এবং আকর্ষণীয় শক্তি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনগুলি পৃথিবীর বার্ষিক গতিপথকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • পৃথিবীর আবর্তন। পৃথিবী নিজ অক্ষে ঘোরে। এই আবর্তন পৃথিবীর বার্ষিক গতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • অন্যান্য গ্রহ এবং চাঁদের আকর্ষণ। অন্যান্য গ্রহ এবং চাঁদের আকর্ষণ পৃথিবীর বার্ষিক গতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

এই কারণগুলির মধ্যে, পৃথিবীর অক্ষের হেলে থাকা হল বার্ষিক গতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এই হেলে থাকা অবস্থাটি পৃথিবীর বিভিন্ন গোলার্ধে বিভিন্ন পরিমাণে সূর্য থেকে সৌর বিকিরণের সংস্পর্শে আসতে দেয়। এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন গোলার্ধে বিভিন্ন ঋতুর সৃষ্টি হয়।

পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফল

পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফলগুলি নিম্নরূপ:

  • ঋতু পরিবর্তন: পৃথিবীর অক্ষের হেলে থাকা অবস্থাটি পৃথিবীর বিভিন্ন গোলার্ধে বিভিন্ন পরিমাণে সূর্য থেকে সৌর বিকিরণের সংস্পর্শে আসতে দেয়। এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন গোলার্ধে বিভিন্ন ঋতুর সৃষ্টি হয়।
  • দিবা-রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি: পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সূর্যের আলোর সংস্পর্শের সময় পরিবর্তিত হয়। এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে দিবা-রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে।
  • দিনের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন: পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে দিনের দৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হয়। এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে দিনের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তন ঘটে।
  • সূর্যাস্তের সময়ের পরিবর্তন: পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সূর্যাস্তের সময় পরিবর্তিত হয়। এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সূর্যাস্তের সময়ের পরিবর্তন ঘটে।
  • আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তন: পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন গোলার্ধে তাপমাত্রার পার্থক্য হয়। এই তাপমাত্রার পার্থক্য পৃথিবীর আবহাওয়া এবং জলবায়ুকে প্রভাবিত করে।
  • উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের বিবর্তন: পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন গোলার্ধে বিভিন্ন ঋতুর সৃষ্টি হয়। এই ঋতু পরিবর্তন পৃথিবীর উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • নদী এবং খালের প্রবাহ: পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে দিনের দৈর্ঘ্য এবং সূর্যের আলোর সংস্পর্শের সময় পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনগুলি পৃথিবীর নদী এবং খালের প্রবাহকে প্রভাবিত করে।

পৃথিবীর বার্ষিক গতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ঘটনা যা পৃথিবীর আবহাওয়া, জলবায়ু, উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের বিবর্তন এবং নদী এবং খালের প্রবাহকে প্রভাবিত করে।