হলুদ সাংবাদিকতা কাকে বলে? হলুদ সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস এবং হলুদ সাংবাদিকতার আধুনিক উদাহরণ

হলুদ সাংবাদিকতা কাকে বলে?

হলুদ সাংবাদিকতা বলতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন রোমাঞ্চকর সংবাদ পরিবেশন বা উপস্থাপনকে বোঝায়। এ ধরনের সাংবাদিকতায় ভালমত গবেষণা বা খোঁজ-খবর না করেই দৃষ্টিগ্রাহী ও নজরকাড়া শিরোনাম দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। হলুদ সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য হল সাংবাদিকতার রীতিনীতি না মেনে যেভাবেই হোক পত্রিকার কাটতি বাড়ানো বা টেলিভিশন চ্যানেলের দর্শকসংখ্যা বাড়ানো।

হলুদ সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য

হলুদ সাংবাদিকতার কিছু বৈশিষ্ট্য হল:

  • ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন: হলুদ সাংবাদিকতায় প্রায়ই ভিত্তিহীন বা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়। এই সংবাদগুলি প্রায়ই অতিরঞ্জিত বা বিকৃত করা হয় যাতে এটি পাঠক বা দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়।
  • দৃষ্টি আকর্ষণকারী শিরোনাম ব্যবহার করা: হলুদ সাংবাদিকতায় প্রায়ই দৃষ্টি আকর্ষণকারী শিরোনাম ব্যবহার করা হয়। এই শিরোনামগুলি প্রায়ই অতিরঞ্জিত বা বিকৃত করা হয় যাতে পাঠক বা দর্শকদের আগ্রহ আকর্ষণ করা যায়।
  • সাধারণ ঘটনাকে একটি সাংঘাতিক ঘটনা বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা: হলুদ সাংবাদিকতায় প্রায়ই সাধারণ ঘটনাকে একটি সাংঘাতিক ঘটনা বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়। এই ধরনের খবরগুলি পাঠক বা দর্শকদের মধ্যে ভয় বা উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
  • কেলেংকারির খবর গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা: হলুদ সাংবাদিকতায় প্রায়ই কেলেংকারির খবর গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হয়। এই ধরনের খবরগুলি জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারে বা তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • অহেতুক চমক সৃষ্টি করা: হলুদ সাংবাদিকতায় প্রায়ই অহেতুক চমক সৃষ্টি করা হয়। এই ধরনের খবরগুলি পাঠক বা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে, কিন্তু এগুলি প্রায়ই সত্য বা বাস্তবতার সাথে সম্পর্কহীন হয়।
  • অপরাধ বা যৌনতা সম্পর্কিত খবরের উপর জোর দেওয়া: হলুদ সাংবাদিকতায় প্রায়ই অপরাধ বা যৌনতা সম্পর্কিত খবরের উপর জোর দেওয়া হয়। এই ধরনের খবরগুলি পাঠক বা দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ বা উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু এগুলি প্রায়ই জনগণের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • পক্ষপাতদুষ্ট বা বিভ্রান্তিকর উপায়ে তথ্য উপস্থাপন করা: হলুদ সাংবাদিকতায় প্রায়ই পক্ষপাতদুষ্ট বা বিভ্রান্তিকর উপায়ে তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এই ধরনের উপস্থাপনা জনগণকে সঠিক তথ্য থেকে বঞ্চিত করতে পারে বা তাদের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে।
  • সাংবাদিকতার নীতি ও মূল্যবোধের অভাব: হলুদ সাংবাদিকতায় প্রায়ই সাংবাদিকতার নীতি ও মূল্যবোধের অভাব থাকে। এই ধরনের সাংবাদিকতা জনগণের মধ্যে সাংবাদিকতা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারে।
  • জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং প্রভাবিত করার উদ্দেশ্য: হলুদ সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য হল জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং প্রভাবিত করা। এই ধরনের সাংবাদিকতা জনগণের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে বা তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।

হলুদ সাংবাদিকতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

হলুদ সাংবাদিকতার ইতিহাস 19 শতকের শেষের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়। তখন নিউ ইয়র্ক সিটিতে দুটি জনপ্রিয় পত্রিকা, “দ্য নিউ ইয়র্ক ওয়ার্নার” এবং “দ্য নিউ ইয়র্ক জার্নাল”, তাদের কাটতি বাড়াতে প্রতিযোগিতা শুরু করে। এই প্রতিযোগিতার ফলে উভয় পত্রিকাই ভিত্তিহীন, রোমাঞ্চকর এবং বিতর্কিত সংবাদ পরিবেশন করতে শুরু করে। এই ধরনের সাংবাদিকতাকে “হলুদ সাংবাদিকতা” বলা হয়।

হলুদ সাংবাদিকতার জন্মের পেছনে দুটি প্রধান কারণ ছিল:

  • তৎকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদপত্রের ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা ছিল খুব বেশি। পত্রিকাগুলি তাদের কাটতি বাড়াতে বিভিন্ন উপায় খুঁজছিল।
  • তৎকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনগণের মধ্যে সাংবাদিকতা সম্পর্কে আগ্রহ ছিল খুব বেশি। মানুষ খবরের জন্য অপেক্ষায় থাকত এবং নতুন এবং উত্তেজনাপূর্ণ খবরের জন্য উন্মুখ থাকত।

হলুদ সাংবাদিকতার জন্ম কোন দেশে

হলুদ সাংবাদিকতার ইতিহাস 19 শতকের শেষের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়। তখন নিউ ইয়র্ক সিটিতে দুটি জনপ্রিয় পত্রিকা, “দ্য নিউ ইয়র্ক ওয়ার্নার” এবং “দ্য নিউ ইয়র্ক জার্নাল”, তাদের কাটতি বাড়াতে প্রতিযোগিতা শুরু করে। এই প্রতিযোগিতার ফলে উভয় পত্রিকাই ভিত্তিহীন, রোমাঞ্চকর এবং বিতর্কিত সংবাদ পরিবেশন করতে শুরু করে। এই ধরনের সাংবাদিকতাকে “হলুদ সাংবাদিকতা” বলা হয়।

হলুদ সাংবাদিকতার আধুনিক উদাহরণ

হলুদ সাংবাদিকতার কিছু আধুনিক উদাহরণ হল:

  • “বাচ্চা হেড” শিরোনাম: 1896 সালে, নিউ ইয়র্ক ওয়ার্নার পত্রিকা “বাচ্চা হেড” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করে। এই খবরটিতে বলা হয়েছিল যে একটি ছোট মেয়েকে তার বাবা-মায়ের দ্বারা হত্যা করা হয়েছে এবং তার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে। এই খবরটি ভিত্তিহীন ছিল এবং এটি একটি বড় কেলেঙ্কারীর জন্ম দেয়।
  • “প্যারাগুয়ে যুদ্ধ”: 1898 সালে, নিউ ইয়র্ক ওয়ার্নার এবং নিউ ইয়র্ক জার্নালের মধ্যে একটি যুদ্ধের প্রতিবেদন নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এই প্রতিযোগিতার ফলে উভয় পত্রিকাই যুদ্ধের ঘটনাগুলিকে অতিরঞ্জিত করে এবং ভুয়া খবর প্রকাশ করে। এই প্রতিযোগিতাটি প্যারাগুয়ে যুদ্ধের জন্ম দেয়, যা একটি রক্তক্ষয়ী এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যুদ্ধ ছিল।

হলুদ সাংবাদিকতা গণমাধ্যমের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা। এটি জনগণকে সঠিক তথ্য থেকে বঞ্চিত করে এবং গণতন্ত্রের জন্য হুমকি তৈরি করে।