সুপার মার্কেট-এর ধারণা | সুপার মার্কেটের বৈশিষ্ট্য | সুপার মার্কেট-এর সুবিধা | সুপার মার্কেট এর অসুবিধা

সুপার মার্কেট-এর ধারণা

(Concept of Super Market)

সুপার মার্কেট হলো বৃহদায়তন খুচরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যেখানে মুদি ও খাদ্যজাতীয় পণ্যদ্রব্য, সবজিপণ্য এবং ফলমূল বিক্রয় করা হয়। এই ধরণের বিতানে ক্রেতা বা ভোক্তা বিক্রেতার সাহায্য ছাড়াই তাকে সাজানো বিভিন্ন ধরণের গৃহসামগ্রী ক্রয় করে থাকে।

সুপার মার্কেট সম্পর্কে নিম্নোক্ত সংজ্ঞাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য-

Philip Kotler & Gary Armstrong এর মতে, “Super market is a large, low cost, low margin, high volume, self-service store that carries a wide variety of food, laundry and household products.” অর্থাৎ সুপার মার্কেট হলো এমন একটি বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান যেখানে কম মূল্যে, কম মুনাফায় ও স্বয়ংক্রিয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য, লন্ড্রি ও গৃহসামগ্রী বিক্রয় করে।

Boove, Houston & Thill এর মতে, “Super markets are stores that sell primarily food items with selections wide enough to meet most customers’ grocery shopping needs” অর্থাৎ সুপার মার্কেট হলো এমন একটি বিপণি যেখানে প্রধাণত খাদ্য সামগ্রী বিক্রয়ের পাশাপাশি ক্রেতাদের মুদি পণ্যের প্রয়োজন মেটানের মতো পর্যাপ্ত পণ্য বিক্রয় করা হয়।

সুপার মার্কেটের বৈশিষ্ট্য

নিম্নে সুপার মার্কেটের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো-

  • সুপার মার্কেটের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এ বিপণিতে প্রধানত মুদি অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রয় করা হয়।
  • বৃহদায়তন ব্যবসায় হওয়ায় এখানে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া অধিক পরিমাণে ক্রয় ও বিক্রয়ের কারণে এ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি বৃহদায়তনের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে।
  • সুপার মার্কেটে বিকেন্দ্রীভূত ক্রয় এবং কেন্দ্রীভূত বিক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
  • অন্যান্য মুদি দোকান হতে সুপার মার্কেটে পণ্যের মূল্য একটু বেশি রাখা হয়। এর ফলে সাধারণ ক্রেতাগণ না আসলেও যারা নিজেদেরকে অন্য সবার চেয়ে আলাদা ভাবতে পছন্দ করে, তারা এরূপ বিপণিতে আসে এবং তাদের পছন্দমত পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে নিয়ে যায়।
  • সুপার মার্কেটে পণ্যের গায়ে বা র‌্যাকে বা নির্দিষ্ট স্থানে পণ্যমূল্য ঝুলিয়ে রাখা হয়। উল্লিখিত মূল্যেই পণ্য বিক্রয় করা হয়। 
  • সাজসজ্জার দিক দিয়েও সুপার মার্কেট অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আলো ঝলমল বিন্যাস ব্যবস্থা, একই ধরনের
  • পণ্যগুলো পাশাপাশি র‌্যাকে সাজিয়ে রাখা, ক্রেতাদের সহজ আগমন ও নির্গমনের প্রশস্থ স্থান, চলাফেরার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ইত্যাদি এ বিপণির অনন্য বৈশিষ্ট্য এনে দেয়।
  • সুপার মার্কেটের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ক্রেতাসাধারণ কারও সাহায্য ছাড়াই তাদের পছন্দমত পণ্যসামগ্রী র‌্যাক হতে সংগ্রহ করতে পারে।
  • সুপার মার্কেটের সকল বিক্রয় নগদে সম্পাদন করা হয়। নগদ বলতে বিহিত মুদ্রা বা ডেবিট কার্ড, মাস্টার কার্ড, সিলভার কার্ড, প্লাটিনাম কার্ড, ভিসা কার্ড ইত্যাদিকে বুঝানো হয়।
  • খুচরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও সুপার মার্কেটের ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারের সকল নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়।

পরিশেষে বলা যায়, বৃহদায়তন খুচরা ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো সুপার মার্কেট-এর অর্ন্তভুক্ত থাকে। এ সকল বৈশিষ্ট্যের আলোকে এ ব্যবসায় সংগঠনকে অন্যান্য খুচরা ব্যবসায় হতে সহজেই পৃথক করা যায়। 

সুপার মার্কেট-এর সুবিধা

(Advantages of Super Market)

সুপার মার্কেট বৃহদায়তন খুচরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। তাই বৃহদায়তন ব্যবসায়ে যে সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকে সে সকল সুযোগ-সুবিধা এ বিপণির ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে ক্রেতা ও বিক্রেতার দৃষ্টিকোণ হতে সুপার মার্কেটের সুবিধা আলোচনা করা হলোঃ

১. সময় ও শ্রম হ্রাস (Less Time and Labor): এ বিপণিতে ভোক্তাদের চাহিদামত সকল পণ্য একই স্থানে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করে বিক্রয় করা হয়। তাই ক্রেতাসাধারণ অতি অল্প সময়ে এবং কম শ্রম ব্যয় করে তাদের পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়। তাছাড়া, এক দামে পণ্য বিক্রি করায় ক্রেতাদের দাম নির্ধারণের জন্য বাড়তি চিন্তা ও সময় নষ্ট করার প্রয়োজন হয় না।

২. উন্নত মানের পণ্য (High Quality Product): সুপার মার্কেটে উন্নত মানের পণ্য বিক্রয় করা হয়। দাম একটু বেশি হলেও উন্নত মানের পণ্য পেয়ে ক্রেতাসাধারণ এরূপ বিপণির প্রতি উৎসাহিত হয়। বিক্রেতাগণ একদিকে যেমন তাদের সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন ও ক্রেতা ধরে রাখার জন্য উন্নত মানের পণ্য বিক্রি করেন, অন্যদিকে ক্রেতাসাধারণও এরূপ বিপণি হতে উন্নত মানের ও নির্ভেজাল পণ্য ক্রয় করতে পারেন।

৩. প্রতারণার সম্ভাবনা কম (Little Possibilty of Defrauding): সুপার মার্কেট স্থায়ী প্রকৃতির বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। সমাজের প্রতি এদের দায়বদ্ধতা অনেক। এরূপ দায়বদ্ধতার কারণে এরূপ বিপণিতে ভেজালমুক্ত ও মানসম্মত পণ্য বিক্রয় করা হয়। এ কারণে সুপার মার্কেট হতে পণ্য ক্রয় করলে ক্রেতাসাধারণের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।

৪. আকর্ষণীয় পরিবেশ (Attractive Environment): সুপার মার্কেটের বিন্যাস পরিকল্পনা অত্যন্ত চমৎকার এবং বাস্তবসম্মত। ক্রেতাসাধারণের আগমন ও প্রস্থানের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পথ রাখা হয়। আবার বিপণিতে চলাচল করার জন্যও পর্যাপ্ত পরিমাণে স্থান রাখা হয়। তাছাড়া, এরূপ বিপণির বিক্রয়কর্মীরা অত্যন্ত দক্ষ, ভদ্র ও বিক্রয়িকতার গুণ সম্পন্ন। তাই তাদের ব্যবহারও অত্যন্ত ভাল। এ সকল কারণে সুপার মার্কেটের পরিবেশ বেশ আকর্ষণীয়।

৫. ব্যয় সংকোচন (Reducing Cost): একই স্থানে এরূপ বিপণি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সকল দিক বিবেচনায় সকল প্রকার ব্যয় সংকোচন করা সম্ভব। একাধিক দালান তৈরি বা ভাড়া নেওয়ায় যে পরিমাণ ব্যয় হয়, তার চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম ব্যয়ে একটি বড় রুম ভাড়া নেওয়া সম্ভব হয়। আবার একই ব্যবস্থাপনার অধীনে একই স্থানে সকল বিভাগ চালু করার কারণেও ব্যয় সংকোচনের বিষয়টি সম্ভব হয়।

৬. বিক্রয় বৃদ্ধি (Increasing Sales): সুপার মার্কেট হতে ক্রেতাসাধারণ তাদের প্রয়োজনীয় সকল মুদি পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারে। তাই তারা বিভিন্ন বিপণিতে না ঘুরে এরূপ বিপণিতে আসে এবং তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করে। এর ফলে সুপার মার্কেটে বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া ব্যবসায়িক সুনাম, মানসম্মত পণ্য, আকর্ষণীয় পরিবেশ ইত্যাদির কারণে এ বিপণির প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি থাকে, ফলে বিক্রয় বৃদ্ধি হয়।

৭. দক্ষ পরিচালনা পদ্ধতি (Efficient Operating System): একই স্থানে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার অধীনে সকল কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় সুপার মার্কেটের পরিচালনা পদ্ধতি দক্ষ হয়। তাছাড়া, এরূপ বিপণিতে নিয়োজিত কর্মীদের বেতনসহ নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়, ফলে তারা আগ্রহ নিয়ে স্বতঃফ‚র্ত হয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে। আবার নতুন কর্মীদের প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থাও এরূপ বিপণিতে করা হয়। সব মিলিয়ে সুপার মার্কেটের পরিচালনায় দক্ষতার ছাপ লক্ষ্য করা যায়।

৮. স্থায়ী গ্রাহক সৃষ্টি (Creating Permanent Client): সুপার মার্কেটের আরেকটি সুবিধা হলো এ বিপণির মাধ্যমে বর্তমান ক্রেতাদের স্থায়ী ক্রেতায় রূপান্তর করা যায়। পণ্যের মান, আকর্ষণীয় পরিবেশ, কেন্দ্রীভূত ক্রয় ইত্যাদি সুবিধাগুলোর কারণে ক্রেতাসাধারণ সুপার মার্কেটে পণ্যদ্রব্য ক্রয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাই যে ক্রেতা একবার এ বিপণি হতে পণ্য ক্রয় করে, সে এর স্থায়ী গ্রাহকে পরিণত হয়। স্থায়ী গ্রাহক যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলকর।

আধুনিক জগতে ক্রেতাসাধারণের বিভিন্নমুখী চাহিদা পূরণের স্বার্থে সুপার মার্কেট-এর আবির্ভাব হলেও ব্যবসায় সংগঠন হতে বিক্রেতাগণও নানামুখী সুবিধা লাভ করতে পারেন। এ সকল সুবিধার কারণেই বর্তমানে সুপার মার্কেট-এর কার্য পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সুপার মার্কেট এর অসুবিধা

(Disadvantages of Super Market)

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপার মার্কেট-এর সুবিধা বিদ্যমান থাকলেও এর অসুবিধাও কিন্তু কম নয়।  সুপার মার্কেট-এর অসুবিধাসমূহ আলোচনা করা হলো-

১. অধিক মূলধন (More Capital): সুপার মার্কেট স্থাপন, ডেকারেশন, পণ্য ক্রয় ইত্যাদির জন্য প্রচুর পরিমাণে মূলধনের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া বৃহদায়তন খুচরা ব্যবসায় হওয়ায় বিভিন্ন কারণে এ ব্যবসায়ের পরিচালন ব্যয়ও বেশি পড়ে। ফলে সুপার মার্কেটের ক্ষেত্রে অনেক সময় মূলধনের অভাব দেখা দেয়।

২. উচ্চ পণ্য মূল্য (High Price of Product): অন্যান্য বিপণি হতে সুপার মার্কেটে পণ্যের মূল্য একটু বেশি রাখা হয়। এর ফলে সাধারণ ক্রেতাগণ এরূপ বিপণিতে আসতে চান না। তাই বলা যায়, উচ্চ মূল্য এরূপ বিপণির একটি অন্যতম অসুবিধা হিসেবে গণ্য হয়।

৩. অত্যধিক পরিচালন ব্যয় (More Operating Cost): অনেক বড় জায়গা এবং উন্নত সাজসজ্জার মধ্য দিয়ে সুপার মার্কেটের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাছাড়া এতে নিয়োজিত কর্মীদেরকে প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি, মানসম্মত বেতন ইত্যাদি দেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে। ফলে এ বিপণির পরিচালন ব্যয় অত্যধিক হয়।

৪. অত্যধিক ঝুঁকি (More Risk): বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে সুপার মার্কেটে ঝুঁকির মাত্রা অত্যন্ত ব্যাপক। অত্যধিক মূলধন, বহু সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারী, ব্যাপক আকারের পরিচালন ব্যয় ইত্যাদি নানা কারণে এ বিপণির পরিচালন ব্যয় অত্যন্ত বেশি। তাছাড়া ক্রেতাদের রুচি, ফ্যাশন, ক্রয় অভ্যাস ইত্যাদি পরিবর্তনের কারণে এ বিপণির ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।

৫. সাধারণ ক্রেতাদের অনীহা (Apathy of Ordinary Customers): অধিক পণ্যমূল্য, ব্যতিক্রমী ব্যবস্থাপনা, আলাদা সাজসজ্জা ইত্যাদি কারণে এ বিপণির প্রতি সাধারণ ক্রেতাদের আগ্রহ থাকে না, যা সামগ্রিক বিচারে ব্যবসায়ের একটি অন্যতম অসুবিধা হিসেবে গণ্য হয়।

পরিশেষে বলা যায়, আধুনিক জগতে সুপার মার্কেটে-এর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এরূপ ব্যবসায় সংগঠনের অসুবিধাও কম নয়। এ সকল অসুবিধার মধ্যে উচ্চ পণ্য মূল্য, অত্যধিক পরিচালন ব্যয়, অত্যধিক ঝুঁকি ইত্যাদি অন্যতম।