শ্বসন কাকে বলে? শ্বসন কত প্রকার ও কি কি? শ্বসন প্রক্রিয়ার পর্যায় | শ্বসনের গুরুত্ব

শ্বসন কাকে বলে?

অক্সিজেন সহযোগে খাদ্যদ্রব্য জারিত হয়ে শক্তি ও CO

2 উৎপন্ন করার প্রক্রিয়াই শ্বসন।

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রাণিদেহের খাদ্যবস্তুকে বায়ুর অক্সিজেনের সাথে জারিত করে মজুদ শক্তিকে ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড নিষ্কাশন করে তাকে শ্বসন বলে। দেহের প্রধান শ্বসন অঙ্গ হলো ফুসফুস। শ্বসনের সরল বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ-

C6H12O6 + 6O2 → 6CO2 + 6H2O + শক্তি (ATP)

শ্বসন হলো একটি বিপাকীয় প্রক্রিয়া যাতে অক্সিজেন গ্রহণ করে খাদ্যের জারণ ঘটে এবং শক্তি উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জল উৎপন্ন হয়।

শ্বসন একটি জটিল প্রক্রিয়া যা কোষের মধ্যে সংঘটিত হয়। এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হলো শ্বাস প্রশ্বাস। শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করা হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করা হয়।

শ্বাস প্রশ্বাসের পরে, অক্সিজেন রক্তের মাধ্যমে কোষে পৌঁছায়। কোষে, অক্সিজেন খাদ্যের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে শক্তি উৎপন্ন করে। এই বিক্রিয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জল উৎপন্ন হয়।

কার্বন ডাই অক্সাইড রক্তের মাধ্যমে ফুসফুসে ফিরে আসে। ফুসফুসে, কার্বন ডাই অক্সাইড শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে বায়ুতে ত্যাগ করা হয়।

শ্বসন হলো একটি জরুরি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই প্রাণীরা বেঁচে থাকে।

শ্বসন প্রক্রিয়ার পর্যায়

শ্বসন প্রক্রিয়াটি দুইটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়:

অন্তঃশ্বসন: অন্তঃশ্বসন হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ফুসফুস থেকে অক্সিজেন রক্তে প্রবেশ করে এবং রক্ত থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে বাইরে নিঃসৃত হয়।

বহিঃশ্বসন: বহিঃশ্বসন হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ফুসফুস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বাইরে নিঃসৃত হয়।

শ্বসন প্রক্রিয়াটি কোষের মধ্যেকার গ্লাইকোলাইসিস, ক্রেবস চক্র এবং ইলেকট্রন পরিবহন শৃঙ্খল এই তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। গ্লাইকোলাইসিস হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গ্লুকোজ জারিত হয়ে দুটি পেন্টোজ ফসফেট, দুটি অণু এটিপি এবং দুটি অণু পাইরুভিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। ক্রেবস চক্র হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পাইরুভিক অ্যাসিড জারিত হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড, জল এবং এটিপি উৎপন্ন হয়। ইলেকট্রন পরিবহন শৃঙ্খল হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে অক্সিজেন থেকে ইলেকট্রন গ্রহণ করা হয় এবং সেই ইলেকট্রনের শক্তি ব্যবহার করে এটিপি উৎপন্ন হয়।

শ্বসন প্রক্রিয়াটি প্রাণীর দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাণীরা শক্তি উৎপন্ন করতে পারে, যা তাদের দেহের সকল কার্যকলাপের জন্য অপরিহার্য। শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাণীরা কার্বন ডাই অক্সাইড বাইরে নিঃসরণ করে এবং বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন সরবরাহ করে।

শ্বসনের গুরুত্ব

শ্বসনের গুরুত্ব নিম্নরূপ:

শক্তি উৎপাদন: শ্বসনের মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন হয় যা প্রাণীদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয়।

বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন: শ্বসনের মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ, যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জল, শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

ভারসাম্য রক্ষা: শ্বসনের মাধ্যমে শরীরের মধ্যে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষিত হয়।