শারীরিক শিক্ষা কাকে বলে?
শারীরিক শিক্ষা হলো সুনির্দিষ্ট শারীরিক কাজকর্মের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক, আবেগিক এবং সামাজিক দিক দিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা। এটি শিক্ষার একটি অপরিহার্য অঙ্গ, যা শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক, আবেগিক এবং সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা সম্পর্কে কয়েকটি প্রাসঙ্গিক সংজ্ঞা-
শিক্ষা ব্যক্তির সর্বোচ্চ সম্ভাব্য শারীরিক ও আত্মিক সৌন্দর্য ও উৎকর্ষ সাধন করে। (Education helps in the body and soul of the pupil all the beauty and all the perfection he is capable of-Plato). শিক্ষা হলো সুস্থ শরীরে সুস্থ মন তৈরি (Education is the creation of sound mind in a sound body)। শরীর, মন ও আত্মার সর্বোচ্চ বিকাশ সাধনই হলো শিক্ষা।
শারীরিক শিক্ষা ও শিক্ষার সম্পর্ক সম্বন্ধে সি. এ. বুচার (C.A. Bucher) বলেছেন – “শারীরিক শিক্ষা, শিক্ষার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শারীরিক শিক্ষা হলো সনির্দিষ্ট শারীরিক কাজকর্মের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক, আবেগিক এবং সামাজিক দিক দিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা।” এ উক্তি থেকে বোঝা যায় শিক্ষা ও শারীরিক শিক্ষা একে অপরের পরিপূরক।
ডি.কে. ম্যাথিউস বলেছেন, শারীরিক কার্যকলাপের দ্বারা অর্জিত শিক্ষাই শারীরিক শিক্ষা।
হপ স্মিথ ও ক্লিফটন বলেছেন, বিজ্ঞানসম্মত ও কৌশলগত অঙ্গসঞ্চালনের নাম শারীরিক শিক্ষা।
জে. বি. ন্যাশ বলেছেন, “শারীরিক শিক্ষা গোটা শিক্ষার এমন একদিক যা মাংসপেশির সঠিক সঞ্চালন ও এর প্রতিক্রিয়ার ফল হিসেবে ব্যক্তির দেহের ও স্বভাবের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করে।”
উল্লিখিত উক্তিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শারীরিক শিক্ষার মূল কথা হলো দেহ ও মনের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষম উন্নয়ন, মানসিক বিকাশ সাধন, সামাজিক গুণাবলি অর্জন ও খেলাধুলার মাধ্যমে চিত্তবিনোদন।
শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্য কি?
- শারীরিক সুস্থতা অর্জনে সহায়তা করা;
- মানসিক বিকাশ সাধন করা;
- আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা;
- সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা;
- নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশ করা;
- দেশপ্রেম ও নাগরিকত্বের চেতনা জাগ্রত করা।
শারীরিক শিক্ষা কত প্রকার?
শারীরিক শিক্ষাকে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। সাধারণত শারীরিক শিক্ষাকে নিম্নলিখিত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়:
- শারীরিক সুস্থতা-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতা অর্জনে সহায়তা করা। এটি শিক্ষার্থীদের শক্তি, ক্ষমতা, গতি, সমন্বয়, নমনীয়তা এবং সহনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- মানসিক বিকাশ-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করা। এটি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, স্মৃতি, চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- আবেগিক বিকাশ-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের আবেগিক বিকাশে সহায়তা করা। এটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সহনশীলতা এবং মানসিক চাপ মোকাবেলায় সহায়তা করে।
- সামাজিক বিকাশ-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিকাশে সহায়তা করা। এটি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, সহযোগিতা, সহানুভূতি এবং অন্যদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এছাড়াও, শারীরিক শিক্ষাকে নিম্নলিখিত উপায়ে ভাগ করা যেতে পারে:
- খেলাধুলা-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক, আবেগিক এবং সামাজিক বিকাশে সহায়তা করা।
- ব্যায়াম-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের ব্যায়াম করার মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা অর্জনে সহায়তা করা।
- যোগব্যায়াম-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের যোগব্যায়াম করার মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশে সহায়তা করা।
- স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষা-ভিত্তিক শারীরিক শিক্ষা: এই ধরনের শারীরিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করা।
শারীরিক শিক্ষার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যগুলির উপর নির্ভর করে এটি বিভিন্নভাবে ভাগ করা যেতে পারে।
শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব কি কি?
শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শিক্ষার্থীদেরকে সুস্থ, সুখী এবং সফল জীবনযাপন করতে সহায়তা করে। শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব নিম্নরূপ:
- শারীরিক সুস্থতা অর্জনে সহায়তা: শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতা অর্জনে সহায়তা করে। এটি শিক্ষার্থীদের শক্তি, ক্ষমতা, গতি, সমন্বয়, নমনীয়তা এবং সহনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শারীরিক সুস্থতা একটি সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য।
- মানসিক বিকাশ সাধনে সহায়তা: শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ সাধনে সহায়তা করে। এটি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, স্মৃতি, চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মানসিক বিকাশ একটি সুস্থ ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য অপরিহার্য।
- আবেগিক বিকাশে সহায়তা: শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের আবেগিক বিকাশে সহায়তা করে। এটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সহনশীলতা এবং মানসিক চাপ মোকাবেলায় সহায়তা করে। আবেগিক বিকাশ একটি সুখী জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য।
- সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা: শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, সহযোগিতা, সহানুভূতি এবং অন্যদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সামাজিক দক্ষতা একটি সফল জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য।
- নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশে সহায়তা: শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশে সহায়তা করে। খেলাধুলা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, এবং দলগত কাজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- দেশপ্রেম ও নাগরিকত্বের চেতনা জাগ্রত করা: শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম ও নাগরিকত্বের চেতনা জাগ্রত করতে সহায়তা করে। খেলাধুলা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, ঐক্য এবং সহযোগিতার চেতনা জাগ্রত করতে সহায়তা করে।
শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদেরকে একটি সুস্থ, সুখী এবং সফল জীবনযাপন করতে প্রস্তুত করে। এটি শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক, আবেগিক এবং সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।