লবণাক্ততা, লবণাক্ততার কারণ, লবণাক্ততার প্রভাব

লবণাক্ততাঃ লবণাক্ততা বলতে মাটিও পানিতে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে বুঝায়। সাধারণত লবণাক্ততার মাত্রা পরিমাপ করা হয় Parts Per Thousand বা পিপিটি (PPT) দ্বারা। সমুদ্রের পানিতে লবণাক্তার গড় মাত্রা ৩৫ পিপিট অর্থাৎ ১ কিলোগ্রাম পানিতে প্রায় ৩৫ গ্রাম লবণ থাকে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বঙ্গোপসাগরের পানি জোয়ারের সময় নদীর মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের ভূমিতে প্রবেশ করে লবণাক্ততা সৃষ্টি করে। সাধারণত আগস্ট মাস থেকে লবণাক্ততা শুরু হয় এবং ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। উপকূলীয় ১৬টি জেলার ৬৪টি উপজেলায় লবণাক্ততা দেখা যায়। এর মধ্যে সর্বাধিক লবণাক্ততায় আক্রান্ত খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা জেলা। এছাড়া বরিশাল, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কক্সবাজার, ফেনী জেলা লবণাক্ততায় আক্রান্ত।

লবণাক্ততার কারণঃ সাধারণত উপকূলীয় অঞ্চলের ভূমিকা পানিতে লবণাক্ততার জন্য জোয়ার-ভাটা ও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়। আর সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য মানুষের বহুমুখী কর্মকাণ্ডকেই দায়ী করা হয়।

লবণাক্ততার প্রভাবঃ লবণাক্ততার ফলে যেসব প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো –

১. উপকূলীয় অঞ্চলের জমি কৃষিকাজের অনুপযোগী হয়ে উৎপাদন হ্রাস পাওয়া;

২. সুপেয় পানির অভাব দেখা দেওয়া;

৩. উদ্বাস্তু লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি;

৪. সম্পদহানি ও দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি;

৫. বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়া;

৬. ব্যবসা – বাণিজ্যের ক্ষতি;

৭. মিঠা পানির মাছের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়;

৮. গাছপালায় মড়ক লাগা ও ফসলের গোড়া পচে যাওয়া;

৯. সামাজিক বন্ধনে শিথিল হওয়া প্রভৃতি।