রাজনৈতিক ক্ষমতা কাকে বলে?

রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যকর করার জন্য কর্তৃত্বের প্রয়োজন। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। রাজনৈতিক কর্তৃত্ব হলো এমন ক্ষমতা যা বৈধ বলে স্বীকৃত হয়েছে। জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার রাজনৈতিক কর্তৃত্বের ব্যাখ্যা প্রদান করে বলেন, “কর্তৃত্ব হলো ক্ষমতা ও বৈধতার সমন্বয় সাধন।” 

সে ক্ষমতাই রাজনৈতিক কর্তৃত্বে রূপান্তর লাভ করে যখন বৈধ বলে স্বীকৃতি অর্জন করতে পারে। ক্ষমতা ও বৈধতার সমন্বয়ই রাজনৈতিক কর্তৃত্বের উৎস। ক্ষমতার বলে মানুষ কর্তৃত্ব দাবী করে। ম্যাক্স ওয়েবার আরো উল্লেখ করেন যে, নাগরিকদের উপর ক্ষমতা প্রয়োগের স্বীকৃতিই হলো বৈধতা। 

রাজনৈতিক কর্তৃত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে অধ্যাপক অ্যালান বল বলেন, “শাসকের অনুমোদনের প্রকৃতি যাই হোক না কেন, শাসন করার অধিকারের স্বীকৃতি হলো রাজনৈতিক কর্তৃত্ব”। 

লিপসেট-এর মতে, “প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা সমাজের জন্য সর্বাপেক্ষা উপযোগী – জনমনে এ বিশ্বাস জাগিয়ে তোলাই বৈধতা।”

বিভিন্ন জনগোষ্ঠী তখনই কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বৈধ বলে মনে করে যখন তাদের মূল্যবোধের সাতে সঙ্গতি খুঁজে পায়। বৈধতা রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জন্য অপরিহার্য। বৈধতা ব্যতীত রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থায়ী হতে পারে না। রাজনৈতিক ক্ষমতার স্থায়িত্বের জন্য বৈধতার একান্ত প্রয়োজন। রবার্ট ডাল উল্লেখ করেন যে, কোন ব্যক্তির প্রভাবের পেছনে বৈধতা থাকলেই তা কর্তৃত্বে পরিণত হয়।

গণসমর্থনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা বৈধ বলে স্বীকৃত হয়। উন্নয়নশীল দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের পর গণভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা বৈধকরণের নজির দেখা যায়। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা এই বৈধতার পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সাধনের মধ্য দিয়েও ক্ষমতার বৈধতা অর্জিত হতে পারে।

আধুনিককালে রাজনৈতিক কর্তৃত্বের তিনটি রূপ বা স্তর লক্ষ্য করা যায়।

  • ঐতিহ্য সমন্বিত রাজনৈতিক কর্তৃত্ব।
  • ব্যক্তিগত গুণাবলী সমন্বয়ে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব
  • আইনগত আমলাতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক যুক্তি সঙ্গত কর্তৃত্ব

কোন ব্যক্তির অসাধারণ গুণাবলী ও জনপ্রিয়তার সমন্বয়ে এরূপ কর্তৃত্ব গড়ে ওঠে। সাধারণতঃ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলোতে এধরনের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। ইতিহাসে এ ধরনের অনেক ব্যক্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। মহাত্মা গান্ধী, শেখ মুজিবুর রহমান, সুকর্ণ, লেনিন, মাও সেতুং প্রমুখ ব্যক্তিগণ এই শ্রেণিভূক্ত। জনসাধারণ এসব নেতাদের শাসন ও কর্তৃত্ব মেনে চলে। বিশেষ অবস্থা পরিবর্তনশীল সমাজে এ ধরনের ক্ষমতার উদ্ভব ঘটে থাকে।

বিভিন্ন দেশে উত্তরাধিকার সূত্রে কর্তৃত্বের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। কোন বংশানুক্রমিক শাসন ব্যবস্থাকে এই শ্রেণীর কর্তৃত্বের অন্তর্ভূক্ত করা যায়। যেমনঃ নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড ও সৌদি আরব প্রভৃতি দেশের রাজতন্ত্র। সমাজ বিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, রাজনৈতিক কর্তৃত্বের এটিই সর্বজনীন ও আদিরূপ। বর্তমান যুগেও রাজনৈতিক ঐতিহ্যের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ আধুনিক রাষ্ট্র ইংল্যান্ডের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে বহু শতাব্দী ধরে সেখানে রাজতন্ত্র টিকে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্টের যে ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়েছে তা সকলেই মেনে চলেছে।