যে পদ্ধতির সাহায্যে শব্দ বা পদের অর্থ সহজ, সরল ও সুনির্দিষ্ট করা যায় তাই যুক্তিবিদ্যায় সংজ্ঞা হিসেবে পরিচিত। যুক্তিবিদ্যার জনক গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল (Aristotle) সর্বপ্রথম কোনো বিষয়ে যৌক্তিক সংজ্ঞা প্রদানের প্রক্রিয়া প্রবর্তন করেন। তবে আধুনিক ও সমকালীন যুক্তিবিদ্যায় এল. এস. স্টেবিং (L.S. Stebbing), আাই. এম. কপি (I. M. Copi), এম. আর. কোহেন (M.R. Cohen), ই. নেগেল (E. Nagel), এইচ. ডব্লিউ. বি. যোসেফ (H.W.B. Joseph), জন হসপার্স (John Hospers) প্রমুখ যুক্তিবিদদের চিন্তায় যৌক্তিক সংজ্ঞার ধারণাটি বিকশিত হয়।
সংজ্ঞার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Definition'।
Definition’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ `Definitio’ হতে উদ্ভূত। Definitio শব্দের অর্থ হলো কোনো কিছুর মূল বৈশিষ্ট্যগুলোকে চিহ্নিত করা। কোনো কিছুর মূল বৈশিষ্ট্য হলো, যে বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়া কোনো একটি বস্তু বা বিষয় আর সে বস্তু বা বিষয় বলে গণ্য হতে পারে না। তাই সংজ্ঞা শব্দের ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে বলা যায় যে, একটি পদের সম্পূর্ণ জাত্যর্থ (মূল বৈশিষ্ট্যগুলো) স্পষ্ট করে প্রকাশ করাই হলো যৌক্তিক সংজ্ঞা। যেমন, মানুষ পদটির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আমরা বলি, ‘মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন জীব’। আমরা জানি মানুষ পদটির সম্পূর্ণ জাত্যর্থ হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তি ও জৈববৃত্তি। অর্থাৎ এখানে মানুষ পদের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে এর সম্পূর্ণ জাত্যর্থ বা মূল বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। তাই মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন জীব’- এ সংজ্ঞাটি মানুষ পদের যথার্থ সংজ্ঞা।
যুক্তিবিদ ওয়েল্টন (Welton) তাঁর Manual of Logic গ্রন্থে যৌক্তিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন, “কোনো পদের জাত্যর্থের সুস্পষ্ট বিবৃতিই হলো যৌক্তিক সংজ্ঞা।”
যুক্তিবিদ ল্যাটা ও ম্যাকবেথ (Latta and Macbeath) তাঁদের The Elements of Logic গ্রন্থে যৌক্তিক সংজ্ঞার আলোচনায় বলেন, “সংজ্ঞা হলো কোনো সংজ্ঞায়িত বস্তুর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের বিবৃতি; অথবা, আধুনিক ভাষায় এটি হলো একটি পদের জাত্যর্থের সুস্পষ্টকরণ।”