মৌলের পর্যাবৃত্ত ধর্ম ও রাসায়নিক বন্ধন | HSC রসায়ন প্রথম পত্র Notes

পর্যায়বৃত্তিক ধর্ম

এক একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর পর একই ধর্ম বারবার আসে। এটিই মৌলের ধর্মের পর্যায়বৃত্ততা। সংশ্লিষ্ট যেসব ধর্মের এ ধরনের পরিবর্তন ঘটে তাদের পর্যায়বৃত্তিক ধর্ম বলে। যেমন- তড়িৎ ঋণাত্মকতা, আয়নীকরণ বিভব, ইলেকট্রন আসক্তি ইত্যাদি।

তড়িৎ ঋণাত্মকতা 

কোন অণুতে উপস্থিত দুটি পরমাণুর মধ্যে শেয়ারকৃত ইলেকট্রন যুগলকে একটি পরমাণুর নিজের দিকে আকর্ষণ করার ক্ষমতাকে তার তড়িৎ ঋণাত্মকতা বলে।

আয়নিকরণ শক্তি

গ্যাসীয় অবস্থায় কোন মৌলের 1.0 মোল বিচ্ছিন্ন পরমাণু সর্ববহিঃস্থ স্তর থেকে একটি করে 1.0 মোল ইলেকট্রন অসীম দূরত্বে অপসারণ করে এক মোল ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় তাকে উক্ত মৌলের আয়নিকরণ শক্তি বলে।

ইলেকট্রন আসক্তি

পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন কাঠামো পুনর্গঠনের সময় কখনও কখনও পরমাণুর স্তরটিতে ইলেকট্রন গৃহীত হয়। গ্যাসীয় অবস্থায় কোন মৌলের 1.0 mol বিচ্ছিন্ন পরমাণুর প্রতিটির সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে একটি করে মোট 1.0 mol ইলেকট্রন গৃহীত হয়ে 1.0 mol ঋণাত্মক চার্জযুক্ত আয়নে পরিণত হলে যে পরিমাণ শক্তি বিমুক্ত হয় তাকে ঐ মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি বলে।

সমযোজী বন্ধন

প্রত্যেকটি পরমাণু একটি করে অযুগল ইলেকট্রন সরবরাহ করে একজোড়া, দুটি করে ইলেকট্রন দিয়ে দুই জোড়া বা সর্বোচ্চ তিনটি করে ইলেকট্রন দিয়ে তিন জোড়া ইলেকট্রন গঠন করে। সরবরাহকৃত এ ইলেকট্রনযুগলগুলো পরমাণুদ্বয় নিজেদের মধ্যে সমানভাবে শেয়ার করে। শেয়ারকৃত প্রতিটি যুগলের ইলেকট্রনদ্বয় বিপরীত স্পিন বিশিষ্ট হয়। তাই এ ধরনের যুগলায়নে শক্তি বিমুক্ত হয় এবং বন্ধন গঠিত হয়। পরমাণুদ্বয় সমান সংখ্যক ইলেকট্রন সরবরাহ করে সমানভাবে শেয়ার করে বলে এভাবে সৃষ্ট বন্ধনকে সমযোজী বন্ধন বলে।

একক বন্ধন

অণু গঠনের সময় দুটি পরমাণুর প্রত্যেকে একটি করে ইলেকট্রন সরবরাহ করে যদি একজোড়া ইলেকট্রন শেয়ার করে তবে যে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয় তাকে একক বন্ধন বলে।

দ্বি-বন্ধন

অণু গঠনের সময় দুটি পরমাণু বহিস্তরে অষ্টক পূর্ণতার জন্য যদি প্রত্যেকে দুটি করে ইলেকট্রন সরবরাহ করে দু’জোড়া ইলেকট্রন শেয়ার করে তবে যে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয় তাকে দ্বি-বন্ধন বলে।

ত্রিবন্ধন

অণু গঠনের সময় দুটি পরমাণুর বহিস্তরে অষ্টক পূর্ণতার জন্য যদি প্রত্যেকে তনিটি করে ইলেকট্রন সরবরাহ করে তিন জোড়া ইলেকট্রন শেয়ার করে তবে যে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয় তাকে ত্রিবন্ধন বলে।

যোজ্যতা বন্ধন মতবাদ

মৌলের পরমাণুর বহিস্তরের বিজোড় ইলেকট্রনের সংখ্যা মৌলের যোজনী নির্দেশ করে। অণু গঠন কালে দুটি পরমাণু নিজ নিজ যোজ্যতাস্তরের বিপরীত স্পিনযুক্ত বিজোড় ইলেকট্রন জোড়ায় জোড়ায় শেয়ার করে তাদের মধ্যে সমযোজী বন্ধন গঠন করে।

আণবিক অরবিটাল মতবাদ

বন্ধন গঠনে অংশগ্রহণকারী পরমাণুর যে অরবিটালে শেয়ারকৃত ইলেকট্রন থাকে সে অরবিটালদ্বয় পরস্পর উপরিস্থাপন বা অধিক্রমণ করে যাতে দুটি নিউক্লিয়াসের মাঝে ইলেকট্রনের সাধারণ ঘনত্ব বিশিষ্ট একটি ক্ষেত্র উৎপন্ন হয়। একে আণবিক অরবিটাল বলে।

সিগমা বন্ধন

অণু গঠনের সময় দুটি পরমাণুর একই অক্ষে অবস্থিত দুটি অরবিটালের প্রান্তিকভাবে বা সামনাসামনি অধিক্রমণ করলে যে বন্ধন সৃষ্টি হয় তাকে সিগমা বন্ধন বলে।

পাই বন্ধন

অণু গঠনের সময় দুটি পরমাণুর একই অক্ষে অবস্থিত দুটি অরবিটাল পাশাপাশি অধিক্রমণ করলে যে বন্ধন গঠিত হয় তাকে পাই বন্ধন বলে।

সংকরণ বা হাইব্রিডাইজেশন

কোন পরমাণুর যোজ্যতাস্তরের একাধিক ভিন্ন শক্তির অরবিটাল মিশ্রিত হয়ে সমশক্তির সমসংখ্যক অরবিটাল উৎপন্ন করার প্রক্রিয়াকে সংকরণ বা হাইব্রিডাইজেশন বলে।

ইলেকট্রনের ডিলোকালাইজেশন

আণবিক বা স্ফটিক কাঠামোর স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য দুটি পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন মেঘ পুঞ্জীভূত না থেকে তা কাঠামোতে সমানভাবে ব্যাপৃত হয়ে সঞ্চালনক্ষম সুষম ইলেকট্রন ঘনত্ব রচনা করে। এ প্রক্রিয়াকে ইলেকট্রনের ডিলোকালাইজেশন বলে।

ইলেকট্রনের ডিলোকাইলাইজেশন পদার্থের বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মের উদ্ভব ঘটায়। যেমন-

১) বেনজিন চক্রে অসম্পৃক্ততা বিশেষ ধরনের। বেয়ার পরীক্ষা দেখায় না।

২) ধাতুর বৈশিষ্ট্যমূলক ঔজ্জ্বল্য, তড়িৎ পরিবাহীতা, নমনীয়তা ও ঘাতসহতা দেখা যায়।

৩) গ্রাফাইট অধাতু হলেও তড়িৎ পরিবাহী এবং ধাতুর মত উজ্জ্বল।

আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল

পদার্থের অণুগুলো পরস্পর যে বল দ্বারা যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ভৌত কাঠামো গঠন করে তাকে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল বলে। এ আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের রূপ বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন –

ক) ডাইপোল-ডাইপোল আকর্ষণ বল

খ) ভ্যান্ডারওয়াল আকর্ষণ বল 

গ) হাইড্রোজেন বন্ধন ইত্যাদি।

অরবিটাল

নিউক্লিয়াসের চারপাশে যে অঞ্চলে ইলেকট্রন প্রাপ্তির সম্ভাবনা সর্বাধিক তাকে অরবিটাল বলে।

একই বা ভিন্ন দুই বা ততোধিক অধাতব মৌলের পরমাণু তাদের যোজ্যতাস্তরের অযুগ্ম ইলেকট্রনকে নিজেদের মধ্যে বা পরস্পর পরস্পরের সাথে শেয়ার করে যে বন্ধন তৈরি করে তাকে সমযোজী বন্ধন বলে।

পর্যায় সারণি

১৮৬৯ সালে রাশিয়ান রসায়নবিদ ‘দিমিত্রি মেন্ডেলিভ’ পারমাণবিক ভরের ভিত্তিতে পর্যায় সারণির উৎকর্ষ সাধন করেন, তাকে Father of Periodic Table বলা হয়।

পরবর্তীতে হেনরি মোসলে পারমাণবিক সংখ্যার ভিত্তিতে পর্যায় সারণিকে পুনর্বিন্যাস করেন।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে, IUPAC স্বীকৃত রাসায়নিক মৌলের সংখ্যা 118 টি।

পারমাণবিক সংখ্যার ভিত্তিতে পর্যায় সারণি বিবেচনা করলে সেটিকে আধুনিক পর্যায় সারণি বলা হয়।

আধুনিক পর্যায় সারণিতে পর্যায় 7টি এবং গ্রুপ 9 টি।

ইলেকট্রন বিন্যাসের ভিত্তিতে বিবেচিত পর্যায় সারণিকে আধুনিকতম পর্যায় সারণি বলা হয়। এটিকে 7 টি পর্যায় ও 18 টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে।

Leave a Comment