মানসিক হিসাবরক্ষণ কাকে বলে? মানসিক হিসাব ব্যবস্থার মূলনীতি

গবেষকরা মনে করেন ভোক্তারা যখন কোন পণ্য কেনাকাটা করে তখন মানসিক বিবেচনাকে বেশি করে কাজে লাগায়। মানসিক হিসাব বা বিবেচনা হলো ভোক্তাদের কোড, ধরণ, এবং আর্থিক প্রাপ্তির মূল্যায়নকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে মনে করা হয় যখন যৌক্তিক বিষয়গুলো পুরোপুরি কাজে লাগে না তখন মানসিক বিবেচনায় অর্থ ব্যয়ের কারণটি অনেক কার্যকর হয়। প্রত্যেক ব্যক্তি বা ক্রেতা তার উদ্বৃত সঞ্চয়কে পৃথক করে কোন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজে লাগায়। তাই যখন সে কোন পণ্য ক্রয় করে তখন মানসিক বিবেচনাকে কাজে লাগিয়ে অর্থের সাশ্রয় করার প্রচেষ্টা চালায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, একজন ব্যক্তি কনসার্টে যাবার জন্য ৫০ টাকার একটি টিকিট ক্রয় করল, যথাসময়ে শো দেখতে গিয়ে তার মনে হলে কনসার্টে আসাটাই তার বৃথা হয়েছে। উক্ত টাকা অন্যভাবে কাজে লাগানো যেত, এটাই মানসিক হিসাব। Chicago Thaler এর মতে, মানসিক হিসাব ব্যবস্থা কতিপয় মূল নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো হলো:

১. ভোক্তারা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকে পড়ে: যখন বিক্রেতারা একটি পণ্যকে বিভিন্ন ব্যপ্তিতে ছড়িয়ে দেয় তখন ক্রেতার পক্ষে সেই ব্যপ্তি থেকে পণ্যকে পৃথকভাবে মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হয়। সাধারণত: বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো যখন একই সারির পণ্য তৈরি করে তখন বিভিন্ন শ্রেণীর ভোক্তারা তাকে বিভিন্ন ভাবে মূল্যায়ন ও গ্রহণ করে।

২. ভোক্তারা ছোটখাট ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইচ্ছুক হয়: বর্তমানের বাজারজাতকারীরা পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু সুবিধা সংযোগ করে পণ্যকে আলাদা বৈশিষ্ট্য মন্ডিত করে তোলে। তাই ভোক্তারা উক্ত পণ্যের মূল্য অধিক হওয়া সত্ত্বেও বাড়তি মূল্য দিতে ইচ্ছুক থাকে। তাই বাড়ীর ক্রেতারা বাড়ী ক্রয় করার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা নিয়ে অধিক মূল্য দিয়ে বাড়ী ক্রয় করে।

৩. ভোক্তারা বড় প্রাপ্তি নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষতিকে মেনে নেয়: মানসিক বিবেচনা নীতির ক্ষেত্রে ভোক্তারা ভাল পণ্য বা সেবার প্রাপ্তির জন্য অধিক পরিমাণ অর্থ প্রদান বা ক্ষতি গ্রহণ করতে ও ইচ্ছুক থাকে। যেমন: দামী গাড়ী বা অভিজাত পণ্য প্রাপ্তির জন্য অধিক কর প্রদান করতে ও তারা রাজী থাকে।

৪. ভোক্তারা পৃথক পৃথক ছোট প্রাপ্তির জন্য বৃহৎ ক্ষতি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক থাকে: ভোক্তারা দীর্ঘমেয়াদে কোন পণ্য বা সেবা থেকে সুফল পাওয়ার জন্য বৃহৎ ক্ষতি স্বীকার করতে বাধ্য থাকে। যেমন: দামী গাড়ী ক্রয় করার ক্ষেত্রে যে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা পাবে তা অধিক দাম দিয়েও সে ক্রয় করবে।

মানসিক হিসাব বা বিবেচনা মূলত: সম্ভাব্য তত্ত্ব থেকে গৃহীত হয়েছে। ভোক্তারা স্বভাবতই ক্ষতি অভিমুখী অবস্থান থাকে। তাই তাদেরকে একটি ফ্রেমওয়ার্কে এনে প্রাপ্তি ও ক্ষতি অনুযায়ী তাদের ভ্যালু মূল্যায়ন করা আবশ্যক।