বহুদলীয় ব্যবস্থা কাকে বলে? সুবিধা ও অসুবিধা

বহুদলীয় ব্যবস্থা কাকে বলে

বহুদলীয় ব্যবস্থা কাকে বলে?

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যখন দুটির বেশি দল রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের লড়াইয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে, তখন তাকে বহুদলীয় ব্যবস্থা বলে। বহুদলীয় ব্যবস্থায় সাধারণত সাধারণ নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারে না। ফলে নির্বাচনে জয়লাভের জন্য অনেক সময় সমমনা দলগুলোর সমন্বয়ে সম্মিলিত সরকার (Coalition Government) গঠিত হয়। ফ্রান্স, ইতালি, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে এরূপ বহুলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে।

বহুদলীয় ব্যবস্থার সুবিধা

  • বহুদলীয় ব্যবস্থায় নির্বাচকমন্ডলীর সামনে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল তাদের নীতি ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হয়। জনগণ এসব দলকে ভালোভাবে বিচার করতে পারে এবং বাছাইয়ের সুযোগ থাকায় এদের মধ্য থেকে একটিকে বেছে নেয়।
  • বর্তমান প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রই জাতি রাষ্ট্র, এর আয়তন যেমন বিশাল লোকসংখ্যা তেমনি বিপুল। ফলে জনজীবনের চাহিদা, সমস্যা ও দাবি বহুমুখী ও বহুমাত্রিক হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বহুদল থাকলে জনমতের কোন দিকই অপ্রকাশিত থাকতে পারে না। বিভিন্ন দলের মাধ্যমে জনগণের বিভিন্নমুখী দাবি প্রকাশিত হয়।
  • বহুদলীয় ব্যবস্থায় সাধারণত কোন দলই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারে না। ফলে কয়েকটি দল মিলে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। ফলে একদলের একনায়কত্ব বা নির্দয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা কুফল থেকে দেশ ও জনগণ মুক্ত থাকে।
  • প্রত্যেক দেশেই বিভিন্ন ধর্ম ও সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়ের লোক বাস করে। বহুদলীয় ব্যবস্থা থাকলে এসব সম্প্রদায়ের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব ঘটে। এতে সকলেই আনুপাতিকভাবে শাসন কাজে অংশগ্রহণ ও স্বার্থের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
  • এ ব্যবস্থায় বিভিন্ন দল ও মতের মহামিলন ঘটে। ফলে আইনসভা জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে এবং তাতে জাতীয় সংহতি ও একতা বৃদ্ধি পায়।

বহুদলীয় ব্যবস্থার অসুবিধা

  • বহুদলীয় ব্যবস্থা অস্থিতিশীল। কোন দলই নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সব চেয়ে বড় দলটিকে অন্যান্য ছোট দলকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিত সরকার গঠন করতে হয়। এতে ছোট দলগুলোর সাথে দর কষাকষি করে সরকার চালাতে হয়। এতে ভুল বুঝাবুঝির সম্ভাবনা থাকে। ফলে কোন দল সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করলে সরকার পতন ঘটে। তাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষুন্ন হয়।
  • বহুদলীয় সরকার এক প্রকার দুর্বল সরকার। একটি দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় গঠিত সরকার যেমন শক্তিশালী হয় বহুদল সমন্বয়ে গঠিত সরকার তেমন শক্তিশালী হয় না। ফলে জাতীয় উন্নয়নে সরকার কোন দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না।
  • শরীক সব দলের মন জুগিয়ে চলতে হয় বলে এ ব্যবস্থায় সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। ফলে জরুরি অবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয় না। তাই জনকল্যাণমূলক কার্যাবলী বিলম্বিত হয়।
  • জনগণ যথেষ্ট মাত্রায় শিক্ষিত না হলে বহু সংখ্যক দলের নীতি ও কর্মসূচি বিচার বিশ্লেষণ করে যোগ্যতমকে বাছাই করতে পারে না। ফলে প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে ভুল নীতি ও আদর্শের পাল্লায় ভোট প্রদান করে বসে।