প্রয়োগবাদের জনক কে?

প্রয়োগবাদের জনক চার্লস পিয়াস। চার্লস সেন্ডারস পার্সের হাতে প্রয়োগবাদের সূচনা হয়। তিনি গণিত, লজিক, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও দর্শনের ইতিহাসের উপরে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ছাড়াও দীর্ঘদিন সরকারি চাকুরীতে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। প্রথমদিকে ভাববাদ এবং ঈশ্বর বিশ্বাস থাকলেও একটা পর্যায়ে তার আমূল পরিবর্তন ঘটে। সমসাময়িক দার্শনিকদের অধিকাংশের মতোই পার্সও ডারউইন এর বিবর্তনবাদ দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হন।

বাস্তববাদ এর পরবর্তী মত হচ্ছে প্রয়োগবাদ। স্বাভাবিকভাবেই উভয় মতবাদ এর মধ্যে সামঞ্জস্য রয়েছে।প্রয়োগবাদ বাস্তববাদের চাইতে আরেক ধাপ বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সংশোধিত ও পরিমার্জিত রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। বাস্তববাদ অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিশ্বে প্রবল আলোড়ন তুলেছিল।

বিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদ এর ভিড়ে প্রয়োগবাদ একটি অভিজ্ঞতাভিত্তিক বলিষ্ঠ দর্শন। প্রয়োগবাদের ইংরেজি প্রতিশব্দ Pragmatism। এ কথাটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ Pragma থেকে, যার সত্যে উপনীত হওয়া যায়। সত্য মানুষের সৃষ্টি। চূড়ান্ত সত্য বলে কিছু নেই। অভিজ্ঞতার পুনর্গঠন এর মধ্য দিয়ে সত্য পরিবর্তিত হয় ও এটি ফলাফলের উপর নির্ভরশীল। যদি কোন বিষয় অভিজ্ঞতার বিচারে ফলপ্রসূ ও উপযোগী প্রমাণিত হয় তবে তাকে সত্য বলে স্বীকার করা হবে; অন্যথায় প্রত্যাখ্যান করা হবে।

প্রয়োগবাদী দার্শনিকগণ একে একটি জীবন দর্শন বলে দাবি করে থাকেন। তাদের মতে, জীবন বাস্তব আর বাস্তবতাই জীবনের সত্যরূপ। শিশুর সার্বিক বিকাশ তাই এ দর্শনের শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। প্রয়োগবাদ হচ্ছে কার্যকরিতা ও জীবনোপযোগিতার দর্শন, নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার দর্শন। এ মতবাদে অভিজ্ঞতার ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উপলব্ধি ছাড়া কোনো বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতা এতে নেই। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে যাচাই না করে কোনো বিষয়কে সত্য বলে স্বীকার করা হয় না। কোনো ভাব, সিদ্ধান্ত বা বিশ্বাস কিভাবে কার্যকরী হয় তা প্রত্যক্ষ না করে গ্রহণ করা হয় না।