পরিমাপে ত্রুটি ও নির্ভুলতা ব্যাখ্যা কর।

পরিমাপে ত্রুটি ও নির্ভুলতা

পরিমাপের সময় বিভিন্ন কারণে পরিমাপে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির
এবং পরীক্ষণের দক্ষতার উপর পরিমাপের নির্ভুলতা নির্ভর করে অর্থাৎ পরিমাপে ত্রুটির
পরিমাণ কম হতে পারে।

ধরা যাক, একটি মিটার স্কেল নেয়া হলো। স্কেলটিতে সেন্টিমিটার ও মিলিমিটারে দাগ
কাটা আছে। এই মিটার স্কেলটির সাহায্যে একটি বইয়ের দৈর্ঘ্য মাপা হলে পরিমাপটি
নির্ভুল ধরে নেয়া যেতে পারে। আবার এই স্কেলের সাহায্যে যদি কোনো ঘরের দৈর্ঘ্য
মাপা হয় তাহলে ত্রুটির পরিমাণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। কারণ এই ক্ষেত্রে স্কেলটি
পরপর কয়েকবার বসিয়ে দৈর্ঘ্য মাপতে হবে।

পরিমাপের নির্ভুলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সব পরীক্ষণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা
উচিত।

যেমন, একটি তারের দৈর্ঘ্য যদি হয় 20 cm তাহলে দৈর্ঘ্য 20cm±0.1cm লেখা যেতে
পারে। এখানে ± দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তারের প্রকৃত দৈর্ঘ্য 19.9cm এবং
20.1cm এর মধ্যে হবে।

সুতরাং 0.1cm হলো পরিমাপের অনিশ্চয়তা বা ত্রুটি।

পরিমাপের ক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। এগুলো হলো-

ক. দৈব ত্রুটি

খ. যান্ত্রিক ত্রুটি

গ. ব্যক্তিগত ত্রুটি

ক) দৈব ত্রুটি 

ধ্রুব রাশির মান সব সময় নির্দিষ্ট। কোনো ধ্রুব রাশিকে কয়েকবার পরিমাপ করলে যে
ত্রুটির কারণে পরিমাপকৃত মানের অসামঞ্জস্য দেখা যায়, সেই ত্রুটিকে দৈব ত্রুটি বলা
হয়। পরিমাপকৃত মানগুলো সঠিক মানের কিছুটা কমবেশি পাওয়া যেতে পারে এবং একই যন্ত্র
দিয়ে একই রাশির মান বারবার পরিমাপ করে গড় মান নিলে এই ত্রুটির মান শূন্য হওয়া
উচিত। যেমন রাস্তার দৈর্ঘ্য মাপার জন্য মিটার স্কেল যতবারই বসানো হয় ততবারই দৈব
ত্রুটির সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ স্কেলটি একবার বসিয়ে উঠানোর সময় স্কেলের সম্মুখ
চিহ্নিত করার জন্য যে দাগ দেওয়া হয় অনেক সময় সামনে বা পিছনে হয়ে যায়। দৈব ত্রুটির
ফলে চূড়ান্ত ফলাফল অত্যন্ত বেশি বা কম পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন
করলে এই ত্রুটির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব।

খ) যান্ত্রিক ত্রুটি 

পদার্থবিজ্ঞানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আমাদের বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহার
করতে হয়। সেই সব যন্ত্রে যদি কোনো ত্রুটি থাকে তাকে যান্ত্রিক ত্রুটি বলা হয়।
যেমন- পরীক্ষাগারে স্লাইড ক্যালিপার্স ব্যবহার করে থাকি। স্লাইড ক্যালিপার্সে যদি
প্রধান স্কেলের শূন্য দাগ ভার্ণিয়ার স্কেলের শূন্য দাগের সাথে মিলে না যায় তাহলে
ধরে নিতে হবে এই যন্ত্রে যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে। তাই পরীক্ষণ শুরুর আগে এটি
ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। যদি পুরোপুরি মিলে না যায় তাহলে ত্রুটির পরিমাণ হিসাব
করে নিতে হবে।

গ) ব্যক্তিগত ত্রুটি 

পরীক্ষণের সময় আমাদের বিভিন্ন পাঠ নিতে হয়। এই সময় পর্যবেক্ষকের কারণে পাঠে যে সব
ত্রুটি আসে তাকে ব্যক্তিগত ত্রুটি বলা হয়। যেমন – দোলকের দোলনকাল নির্ণয়ের সময়
যদি দোলন সংখ্যা নির্ণয় করতে ভুল হয় তাহলে সঠিক দোলনকাল পাওয়া যাবে না। এই সকল
ব্যক্তিগত ত্রুটি দূর করার সময় যথাসম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

আরো পড়ুনঃ