পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব ও পদ্ধতি

আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহটিকে জীবের বাসযােগ্য করে রাখার জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ অপরিহার্য। এই পৃথিবীতে রয়েছে অসংখ্য জীব আর মাটি, পানি, বায়ুর মতাে জীবনধারণের বিভিন্ন উপাদন। বর্তমান পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এ ধরনের বিভিন্ন ধরনের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এই সমস্ত প্রাকৃতিক উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংকটজনক এই পরিস্থিতিতে পরিবেশসচেতন হয়ে উঠলে বিপর্যয় আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। 

আমাদের পরিবেশে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উদ্ভিদ, কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে বৃহদাকৃতির প্রাণী বা উদ্ভিদ কেউই অবাঞ্ছিত বা মূল্যহীন নয়। প্রকৃতির রাজ্যে সকল জীব এবং জড় পদার্থ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একে অপরের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ। লক্ষ লক্ষ প্রজাতির উদ্ভিদ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, মানুষ ইতাদি নিয়ে গড়ে উঠেছে জীববৈচিত্র্য, যার উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে মানবজাতির কল্যাণ এবং অস্তিত্ব। 

অরণ্য, পাহাড়, জলাভূমি, সমুদ্র জীববৈচিত্র্যের অতীব প্রয়ােজনীয় আধার। কাজেই পরিবেশ সুরক্ষিত থাকলে জীববৈচিত্র্য টিকে থাকবে। মনে রাখতে হবে, মানুষ ছাড়াই জীববৈচিত্র্য টিকে থাকতে পারবে কিন্তু জীববৈচিত্র্য না টিকলে মানুষ টিকে থাকতে পারবে না।

পরিবেশ সুরক্ষিত থাকলে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলাে, যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, ঔষধ, জ্বালানি, পানিসহ প্রয়ােজনীয় উপকরণাদি পরিবেশ থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যাবে। পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিশেষ করে বনাঞ্চল ধ্বংস হলে বৃষ্টিপাতের হার কমে যায়, চাষবাদের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। 

গ্রিনহাউস গ্যাস (CO2, CO, CH4, N2O ইত্যাদি) বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যাকে গ্রিনহাউস এফেক্ট (Green house effect) বলে। গ্রিনহাউস এফেক্টের কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে এবং উপকূল অঞ্চল তলিয়ে যাবে, আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে, বনাঞ্চল ধবংস হবে, বিভিন্ন রােগবালাইয়ের প্রভাবে ফসলের ক্ষতি হবে, মানুষের মধ্যে নতুন সব রােগের প্রকোপ দেখা দিবে, ঝড়-জলােচ্ছ্বাসের তীব্রতা বেড়ে যাবে। পরিবেশ সুরক্ষিত থাকলে গ্রিনহাউস এফেক্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তাই এখন থেকেই পরিবেশ সংরক্ষণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

মানুষ বর্তমানে তার নিজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে পরিবেশ সংরক্ষণের কথা জোরেশােরে বলা শুরু করেছে। সুস্থ পরিবেশ রক্ষার জন্য সমগ্র বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক আন্দোলন গড়ে তোলাও জরুরি। বৃক্ষরােপণকে শুধু মাস বা সপ্তাহে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিদিন যে গাছ কাটা হবে ঠিক তার দ্বিগুণ গাছ লাগানাের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে ইচ্ছামতাে গাছ লাগালেই চলবে না, যেখানে যে ধরনের গাছ উপযুক্ত বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সহায়ক, সেখানে সে ধরনের গাছই লাগাতে হবে।

কোনাে এলাকার শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রভৃতি নির্মাণের পূর্বে সেই এলাকার পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব হতে পারে কি-না তা বিবেচনা করতে হবে এবং বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করতে হবে। পরিকল্পিত নগরায়ণ করতে হবে। নগরায়ণের সাথে অবশ্যই বৃক্ষায়ন করতে হবে। জ্বালানি হিসেবে কাঠের পরিবর্তে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে, উপকারী জীবাণু স্থলজ পােকামাকড় ধবংস করে, জলজ ও মাটির বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করে। কাজেই জৈবসারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে। 

মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা বিভিন্নভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায়। জনসংখ্যা সীমিত রেখে সচেতন এবং শিক্ষিত জনগােষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে। পরিবেশদূষণ রােধে পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়ােজন। প্রচার মাধ্যমকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাসের উৎপাদন হ্রাস করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে ভূমিক্ষয় রােধ হবে। নদী খনন করে এবং প্রাকৃতিক জলাধারগুলাে সংরক্ষণ করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে। এতে লবণাক্ততা এবং জলাবদ্ধতা দূর হবে, পানির বাস্তুত স্বাভাবিক থাকবে।

পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অত্যাবশ্যক এবং সেই লক্ষ্যে যে সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে, তাদেরকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করতে হবে। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ, শব্দ দূষণ যাতে না হয় সে রকম সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশ নীতিকে যথার্থভাবে অনুসরণ করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ নীতিকে যথার্থভাবে অনুসরণ করতে হবে।