জোয়ার ভাটা কাকে বলে? জোয়ার ভাটার উপকারিতা | জোয়ার ভাটার অসুবিধা

জোয়ার ভাটা হলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান ও পতন। এটি পৃথিবীর বাইরের মহাকর্ষীয় শক্তির প্রভাবে ঘটে। চাঁদের মহাকর্ষীয় শক্তি সমুদ্রের জলকে আকর্ষণ করে এবং ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান ঘটে। সূর্যের মহাকর্ষীয় শক্তিও জোয়ার ভাটার ক্ষেত্রে একটি ভূমিকা পালন করে। তবে চাঁদের মহাকর্ষীয় শক্তি সূর্যের মহাকর্ষীয় শক্তির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় জোয়ার ভাটার ক্ষেত্রে চাঁদের প্রভাব বেশি।

জোয়ার ভাটা প্রতিদিন দুবার ঘটে, একবার জোয়ার এবং একবার ভাটা। জোয়ারের সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং ভাটার সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা হ্রাস পায়।

জোয়ার ভাটার উপকারিতা

জোয়ার ভাটার কিছু উপকারিতা নিম্নরূপ-

  • জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: জোয়ার ভাটার শক্তি ব্যবহার করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। জোয়ার ভাটার সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং ভাটার সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা হ্রাস পায়। এই উত্থান ও পতনকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে।
  • মাছ ধরা: জোয়ার ভাটার ফলে সমুদ্রের তলদেশের খাদ্যবস্তু ভেসে ওঠে, যা মাছ ধরা সহজ করে তোলে। জোয়ারের সময় সমুদ্রের তলদেশের খাদ্যবস্তু ভেসে ওঠে এবং ভাটার সময় সমুদ্রের তলদেশের খাদ্যবস্তু নদী ও খালগুলিতে প্রবাহিত হয়। এই খাদ্যবস্তু মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎস।
  • নৌপরিবহন: জোয়ার ভাটার ফলে নৌযানগুলির চলাচল সহজ হয়। জোয়ারের সময় নৌযানগুলি গভীর জলে চলাচল করতে পারে এবং ভাটার সময় নৌযানগুলি উপকূলীয় এলাকায় নোঙর করতে পারে।
  • উপকূলীয় এলাকায় জল সরবরাহ: জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করে এবং ভাটার সময় এই জল ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ভূমি পুনরুদ্ধার: জোয়ার ভাটার ফলে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত জল প্রবেশ করে। এই জল জমিকে লবণাক্ত করে তুলতে পারে, যা ফসল চাষের জন্য ক্ষতিকর। জোয়ার ভাটার ফলে লবণাক্ত জল বের করে আনা যেতে পারে এবং জমিকে পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে।
  • পর্যটন: জোয়ার ভাটা একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। জোয়ার ভাটার সময় উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন ধরণের জল ক্রীড়া এবং কার্যকলাপের সুযোগ রয়েছে।

জোয়ার ভাটার অসুবিধা

জোয়ার ভাটার কিছু অসুবিধা হলো:

  • উপকূলীয় ক্ষয়: জোয়ার ভাটার ফলে উপকূলীয় এলাকায় ক্ষয় হতে পারে। জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল সমুদ্রতীরের উপর আঘাত করে এবং ভাটার সময় এই জল সমুদ্রতীরকে ক্ষয় করে। এই ক্ষয়ের ফলে উপকূলীয় এলাকাগুলি বসবাসের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে।
  • বন্যার ঝুঁকি: জোয়ার ভাটার ফলে নদী ও উপকূলীয় এলাকায় বন্যা হতে পারে। জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল নদী ও খালগুলিতে প্রবেশ করে এবং ভাটার সময় এই জল উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করে। এই জল বন্যা সৃষ্টি করতে পারে, যা মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি করতে পারে।
  • পরিবেশগত প্রভাব: জোয়ার ভাটার ফলে সমুদ্রের জলের মধ্যে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এই লবণাক্ত জল উপকূলীয় এলাকার উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • প্রযুক্তিগত সমস্যা: জোয়ার ভাটার ফলে নৌযান, ব্রিজ এবং অন্যান্য অবকাঠামোতে সমস্যা হতে পারে। জোয়ারের সময় এই অবকাঠামোগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

জোয়ার ভাটা একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যা পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠকে প্রভাবিত করে। এটি বিভিন্ন উপায়ে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে।