জলাবদ্ধতা কাকে বলে? জলাবদ্ধতার কারণ ও প্রতিকার | জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয়

জলাবদ্ধতা কাকে বলে?

জলাবদ্ধতা হল এমন একটি অবস্থা যখন কোনও অঞ্চলে জল জমে থাকে এবং তা স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশিত হতে পারে না। এটি একটি পরিবেশগত সমস্যা যা মানুষের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং সুযোগ-সুবিধার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জলাবদ্ধতার সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে দেওয়া হয়। সাধারণত, জলাবদ্ধতাকে এমন একটি অবস্থা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যখন কোনও অঞ্চলের মাটির উপরিভাগের 50% বা তার বেশি অংশ জল দ্বারা আবৃত থাকে। এটি দীর্ঘস্থায়ী বা অস্থায়ী হতে পারে।

জলাবদ্ধতার কারণ ও প্রতিকার

জলাবদ্ধতার কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • অত্যধিক বৃষ্টিপাত বা ঝড়: অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের কারণে নদী, খাল, নালা এবং অন্যান্য জলাশয়ের ধারণক্ষমতা অতিক্রম করে যেতে পারে। ফলে অতিরিক্ত জল নিষ্কাশিত হতে না পেরে নিম্নাঞ্চলগুলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে।
  • অপ্রতুল নিষ্কাশন ব্যবস্থা: অপ্রতুল নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে বৃষ্টির জল এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা জল স্বাভাবিকভাবে নিষ্কাশিত হতে পারে না। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
  • নদীর বাঁধ নির্মাণ: নদীর বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর প্রবাহ ব্যাহত হয়। ফলে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে পরিবর্তন আসে এবং নিম্নাঞ্চলগুলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
  • ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন, যেমন বন উজাড়: বন উজাড়ের ফলে ভূমির জল ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে বৃষ্টির জল দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে না এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
  • জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন এবং পরিমাণে পরিবর্তন আসছে। ফলে অত্যধিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জলাবদ্ধতার কারণ হতে পারে।

জলাবদ্ধতার প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • স্বাস্থ্য সমস্যা: জলাবদ্ধতা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে, যেমন টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি।
  • অর্থনৈতিক ক্ষতি: জলাবদ্ধতার ফলে ফসলের ক্ষতি, পরিবহন বাধা, শিল্পের ক্ষতি ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়।
  • সামাজিক সমস্যা: জলাবদ্ধতার ফলে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার অপ্রবেশযোগ্যতা, বাস্তুচ্যুতি ইত্যাদি সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়।

জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয়

জলাবদ্ধতা একটি জটিল সমস্যা যার একাধিক কারণ রয়েছে। তাই এর নিরসনে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয়গুলি হল:

দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ

  • নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি: নদী, খাল, নালা ইত্যাদির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কারের মাধ্যমে নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি করা।
  • বৃষ্টির জল সংরক্ষণ: বৃষ্টির জল সংরক্ষণের মাধ্যমে নদী, খাল, নালা ইত্যাদির উপর চাপ কমানো।
  • ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন: বনায়ন, জলাভূমি পুনরুদ্ধার ইত্যাদির মাধ্যমে ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন করা।
  • জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া: জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া, যেমন বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, নদীর বাঁধ নির্মাণ, পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।

সল্পমেয়াদী পদক্ষেপ

  • জলাবদ্ধ এলাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেমন পাম্প, নলকূপ ইত্যাদি।
  • জলাবদ্ধ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা।

জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের পাশাপাশি জনসাধারণেরও সচেতনতা ও অংশগ্রহণ প্রয়োজন। জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণগুলি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা এবং তাদেরকে এ সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা উচিত।

জলাবদ্ধতা প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ 

জলাবদ্ধতা প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যেমন:

  • বৃষ্টির জল সংরক্ষণ: বৃষ্টির জল সংরক্ষণের মাধ্যমে নদী, খাল, নালা ইত্যাদির উপর চাপ কমানো যায়।
  • নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি: নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমে বৃষ্টির জল এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা জল দ্রুত এবং কার্যকরভাবে নিষ্কাশিত করা যায়।
  • ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন: ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন, যেমন বনায়ন, জলাভূমি পুনরুদ্ধার ইত্যাদির মাধ্যমে জলাবদ্ধতা কমানো যায়।
  • জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া: জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যেমন বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, নদীর বাঁধ নির্মাণ, পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।