উদ্যান ফসল কাকে বলে? উদ্যান ফসলের প্রকারভেদ, উদ্যান ফসলের বৈশিষ্ট্য, উদ্যান ফসলের গুরুত্ব, মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসলের তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য

উদ্যান ফসল কাকে বলে?

উদ্যান ফসল বলতে সেসব ফসলকে বোঝায় যেগুলো অনেক সময় বেড়া দিয়ে উৎপাদন করা হয়। সাধারণতঃ উদ্যান ফসলের চাষ স্বল্প পরিসরে করা হয়। কিন্তু বর্তমানে ক্রমবর্ধমান মানুষের চাহিদা মিটাতে বিস্তৃত এলাকায়ও উদ্যান ফসলের চাষ করা হয়। উদ্যান ফসল বন্যামুক্ত উঁচু জমিতে বিশেষ যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়। সাধারণত বসতবাড়ির আশে পাশে উর্বর জমিতে উদ্যান ফসল চাষ করা হয়। 

রাস্তার ধারে, পতিত জমিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট কথা ছোট উঁচু জমি যেখানে আছে সেখানেই উদ্যান ফসল চাষ করা হয়। এছাড়া ঘরের বারান্দায়, ছাদে টবের মধ্যেও চাষ করা হয়। উদ্যান ফসল চার প্রকার। যথাঃ 

১) ফল জাতীয় ফসলঃ যেমন- আম, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা, লিচু, আনারস, পেঁপে, কুল ইত্যাদি।

২) ফুল জাতীয় ফসলঃ যেমন- গোলাপ, গাঁদা, গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকিা ইত্যাদি।

৩) শাকসবজি জাতীয় ফসলঃ যেমন- বেগুন, টমেটো, বাঁধা কপি, ফুলকপি, ডাটা শাক ইত্যাদি।

৪) মসলা জাতীয় ফসলঃ যেমন- পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, আদা, এলাচ ইত্যাদি।

উদ্যান ফসলের প্রকারভেদ

উদ্যান ফসলকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

(১) ফুল জাতীয় ফসলঃ যে সব বাগানে প্রধানত স্থানীয় সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ফুল গাছ অথবা সুদৃশ্য গাছ-পালা জন্মানো হয়ে থাকে তা ফুল বাগান বা পুস্পোদ্যান নামে পরিচিত হয়। কখনও কখনও স্বাভাবিকভাবেই এ জাতীয় উদ্যান সৃষ্টি হয়। আজকাল আমাদের দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিস্তৃত জমিতে ফুলের চাষ করা হয়। যেমন – গাঁদা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ ইত্যাদি।

(২) ফল জাতীয় ফসলঃ ফল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে যে বাগান গঠন করা হয়, তাই ফল বাগান নামে পরিচিত। যেমন – আম, লিচু, কলা ইত্যাদি।

(৩) সবজি বাগানঃ এ বাগান সাধারণত শাকসবজি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। যেমন – বেগুন, ঢেঁড়স, কুমড়া, পটল ইত্যাদি।

উদ্যান ফসলের বৈশিষ্ট্য

১) সাধারণত স্বল্প জমিতে চাষ করা হয়।

২) জমি উঁচু হতে হবে, জমির চারপাশে অনেক সময় বেড়া দিতে হয়।

৩) প্রতিটি গাছের আলাদা যত্ন নিতে হয়।

৪) তুলনামূলক বেশি যত্ন নিতে হয়।

৫) ফসলের মূল্য মৌসুমের শুরতে বেশি হয়। ফসল উৎপাদন খরচ কম হয় এবং লাভ বেশি হয়।

৬) ফসল উৎপাদনে ঝুঁকি কম।

৭) একই জমির সব ফসল একই সময়ে পরিপক্ক হয় না তাই কয়েকবার ফসল সংগ্রহ করতে হয়।

৮) অন্তঃপরিচর্যা বেশি করতে হয় এবং নিয়মিত পানি সেচ দিতে হয়।

৯) এরা স্বল্প সময়ের, একবর্ষজীবী ও বহুবর্ষজীবী হতে পারে।

১০) ফসল সাধারণত তাজা বা রন্ধন অবস্থায় ব্যবহার করতে হয়।

১১) বেশিরভাগ উদ্যান ফসলই দ্রুত পচনশীল। 

১২) উদ্যান ফসলের বীজ বা চারা সাধারণত সারিতে বপন বা রোপন করা হয়।

উদ্যান ফসলের গুরুত্ব

বাংলাদেশের ব্যবসায়িক লাভের উদ্দেশ্যে বিস্তৃত মাঠে উদ্যান ফসল চাষ করা হয়। তবে স্বল্প পরিসরে পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর জন্যই মুলত উদ্যান ফসল চাষ করা হয়। পরিবারের ফল ও শাকসবজির চাহিদা যোগান দেয়ার পাশাপাশি বাড়তি ফসল বিক্রয় করে নগদ অর্থ উপার্জিত হয়। এছাড়া গৃহপালিত পশুর খাদ্যের উৎস হিসেবে ফল গাছের পাতা ব্যবহৃত হয়। বয়স্ক ফল গাছ থেকে উন্ন জাতের কাঠ ও জ্বালানি পাওয়া যায়। এছাড়া ফুল চাষের মাধ্যমে যেমন বিনোদন পাওয়া যায় তেমন ফুল চাষ করে অনেক শিক্ষিত ও অশিক্ষিত লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হচ্ছে। ফল, শাকসবজি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং এগুলো বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হচ্ছে।

মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসলের তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য 

মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসলের তুলনামূলক বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ – 

নং  মাঠ ফসল  উদ্যান ফসল 
 ১জমিতে সাধারণত সমষ্টিগত পরিচর্যা করা হয়, অর্থাৎ প্রতিটি গাছের জন্য পৃথক পরিচর্যা করা হয় না।প্রতিটি গাছের পরিচর্যা পৃথকভাবে করা হয়।
 ২সাধারণত ফসলের মাঠে বেড়া দেওয়া হয় না।অনেক সময় ফসলের মাঠে বেড়া দেওয়া হয়।
 ৩ফসলের উপর ভিত্তি করে নিচু, মাঝারি ও উঁচু সব ধরনের জমিতে চাষ করা হয়।সাধারণত উঁচু জমিতে চাষ করা হয়।
 ৪সাধারণত এই জমির সব ফসল একই সময় পরিপক্ক হয় এবং একই সময়ে সংগ্রহ করা হয়।একই জমির ফসল বিভিন্ন সময় পরিপক্ক হয় এবং কয়েকবার সংগ্রহ করা হয়।
 ৫প্রায় সব মাঠ ফসলই শুকিয়ে ব্যবহার করা যায়।প্রায় সব উদ্যান ফসলই তাজা অবস্থায় ব্যবহার করা হয়।
 ৬শুকিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।বিশেষ প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না।
 ৭দ্রুত পচনশীল নয়।দ্রুত পচনশীল।
 ৮সেচ কম দিলেও তেমন ক্ষতি হয় না।নিয়মিত সেচ দিতে হয়।