অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষা কাকে বলে?

অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষা কাকে বলে?

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সাধারণ মূলস্রোতের শিক্ষায় অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করবার আধুনিক ও আদর্শ ব্যবস্থাপনা হলো অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষা। দু-একটি বাক্যে অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষার সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এটি কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষা পরিকল্পনা বা সক্রিয়তার কর্মচূচি নয়, একটি আদর্শ অবস্থা এবং সদর্থক সহযোগিতার একটি সামগ্রিক প্রয়াস। Fuchs and Fuchs (1994)-এর মতে অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষার বিস্তৃত পরিধির অন্তর্গত-

ক) REI (Regular Education Initiatives) বা মৃদু অক্ষমতাযুক্ত শিক্ষার্থীকে সাধারণ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদান করা;
খ) ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও শিক্ষকদের ক্ষমতা প্রদান করা;
গ) শিক্ষণ পদ্ধতির পুনর্গঠন করা এবং
ঘ) সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল – বিশেষ শিক্ষার অবসান ঘটানো। মূলস্রোতের ও বিশেষ শিক্ষার ভিতর সামঞ্জস্য বিধানের প্রয়াস দেখা যায় সমন্বিত শিক্ষায়। পরবর্তীকালে Education For All (EFA) এই স্লোগানকে বাস্তবায়িত করার লক্ষে অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষা এক জরুরি পদক্ষেপ। এটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী ও মূলস্রোতের শিক্ষাধারার দূরত্ব অতিক্রম করে এবং শিক্ষার মৌলিক অধিকারকে পূর্ণ মর্যাদা দেয়।

অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষার সাফল্য কেবলমাত্র বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করে না। রাষ্ট্র, প্রশাসন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থীর পরিবার, বসবাসকারী অঞ্চলের অধিবাসীবৃন্দ, ইত্যাদি সবার সমান দায়িত্ব থাকে এই অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষাকে কার্যকারী করে তোলার ক্ষেত্রে।

গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায় – অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার কয়েকটি ভিত্তিমূলক শর্ত হলো-

  • সংযুক্তিকরণ বা Involvement
  • বৈষম্যহীনতা বা No discrimination
  • একত্রীকরণ বা Collaboration
  • পর্যায়করণ বা Leveling
  • বিদ্যালয় তথা সমাজের ব্যবহার ইত্যাদি বা Universal design of School and Society
  • সম্পদের তাৎপর্যময় ব্যবহার ইত্যাদি বা Improvisation of resources

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার উপাদান

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ধারণাকে স্পষ্ট করে তুলবার জন্য দেখা যাক কোনগুলি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ধারণার অন্তর্গত। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বলে বোঝানো হয়-

  • যে শিক্ষা ছাত্রবৈচিত্র্যকে স্বাগত জানায়।
  • যে শিক্ষায় কেবলমাত্র শিক্ষা বহির্ভূত নয় সমস্ত শিক্ষার্থীই উপকৃত হয়।
  • যে শিক্ষায় সমস্ত শিক্ষার্থী যারা বিদ্যালয়ে নথিবদ্ধ হয়েও বহির্ভুত বোধ করে অংশগ্রহণ করে।
  • যে শিক্ষা সমস্ত শিক্ষার্থীর প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত করবার জন্য শিক্ষার ক্ষেত্রে উপযুক্ত শর্ত তৈরি করে।

এই আলোতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার চারটি মুখ্য উপাদান উল্লেখ করা হলো-

ক) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা একটি প্রক্রিয়া
খ) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, শিক্ষার পথে বাধাগুলি চিহ্নিত করবার ও বাধাগুলি দূর করবার একটি সুযোগ।
গ) অন্তর্ভুক্তি শিক্ষা সমস্ত শিক্ষার্থীর উপস্থিতি, অংশগ্রহণ ও প্রাপ্তিকে নিশ্চিত করবার একট মাধ্যম ও প্রয়াস।
ঘ) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সেইসব শিক্ষার্থীর শিক্ষায় অংশগ্রহণ করার একটি উপায় যারা কোনো কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে প্রান্তীয় অবস্থানে আছে, অনগ্রসর, অথবা শিক্ষায় কাম্য দক্ষতা অর্জন না করতে পেরে ক্রমে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

অন্তর্ভুক্তি শিক্ষার নীতি

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রধান কয়েকটি নীতি আছে। যেমন-

  • প্রতিটি শিশুই একে অন্যের অপেক্ষা পৃথক এবং বিশেষ চাহিদা সকলেরই কোনো না কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়। সেই নিরিখে ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।
  • বন্ধুত্ব পরিবেশে, কোনো ভীতি সঞ্চার না করে, শিশুদের শিক্ষাদানের উপযোগী যেকোনো শিক্ষণ পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত।
  • কেবলমাত্র পুথিগত শিক্ষাদানের পরিবর্তে একজন শিক্ষকের উচিত জীবনযাপনের উপযোগী প্রয়োজনীয় তথ্য পরিবেশন করা।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রধান তিনটি দিক হলো-

  • অপরিহার্য পরিসেবা প্রদান (Essential Services)
  • সহায়ক পরিসেবা প্রদান (Support Services)
  • অন্যান্য পরিসেবা প্রদান (Peripheral Services)